রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে করা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব না দেয়ার অভিযোগে করা মামলার তদন্তে শেষে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
সোমবার বিচারিক আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহা. মাহবুবুল আলম। চার্জশিট নম্বর ২১৮। গতকাল রোববার এই চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয় কমিশন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, রানা প্লাজা ধসের পর পরই সোহেল রানার সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে কমিশন।
ওই বছরের ১৫ মে দুদকের অনুসন্ধান দল সোহেল রানার সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির সুপারিশ করে। তবে সোহেল রানা কারাগারে থাকার কারণে সৃষ্ট আইনি জটিলতায় প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়।
দুদক আইন অনুযায়ী নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে আইনজীবীর মাধ্যমে স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দিতে হয়। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে আরও সাত কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী জমা না দেয়ায় রানার বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ মে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে দুদক। সেই মামলার তদন্ত শেষে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে একমাত্র আসামি করে আজ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় চার্জশিটটি দাখিল করা হয়।
অন্যদিকে, নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগে রানার বাবা, মা ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ জুন মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলায় রানাকে আসামি করা হয়নি। এছাড়া প্রায় ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে রানাকে ছাড়াই তার বাবা-মাকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছি।
আবার ২০১৪ সালের ১৫ জুন রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতি অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। পরে সেই মামলার তদন্ত শেষে সোহেল রানা ও তারা বাবা-মাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছিল সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টায় সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের এই বহুতলটি ভবন ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় বলে সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়।
এই মর্মান্তিক ভবনধস বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ভবন ধ্বসের পর একই বছরের ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাবার সময় বেনাপোল থেকে সোহেল রানাকে থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বিবার্তা/রোকন/কাফী