সুন্দরবনে খুব শিগগিরই জলদস্যুদের রাজত্বের অবসান হবে। জলদস্যু বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ইতোমধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার কিংবা আত্মসমর্পণ করেছে। আরো অনেকেই সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অপারেশন অফিসার পুলিশের এএসপি মো. নিজামউদ্দিন বলেন, দস্যুদের ২০টি বাহিনী সুন্দরবন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমানে মাত্র ৪টি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় বাকি ১৬টি বাহিনী তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে।
কয়েকটি বাহিনী আত্মসমর্পণের পাইপলাইনে রয়েছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে চারটি অখ্যাত বাহিনীর মধ্যে ‘জাহাঙ্গীর বাহিনী’ সুন্দরবন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড খুলনা, শরণখোলা ও মংলা রেঞ্জে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, র্যাবের অভিযানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় ৫টি বাহিনীর আত্মসমর্পণসহ ১৯৯ জন জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে ৬১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬ হাজার ৪৫১ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে।
বর্তমানে জলদস্যুদের জেলে নৌকায় ডাকাতি, মুক্তিপণের জন্য জেলেদের অপহরণ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টোল আদায়সহ তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
সুন্দরবন থেকে জলদস্যু নির্মূল করার লক্ষ্যে র্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
সরকার পুনরায় সুন্দরবন এলাকার চার জলদস্যু বাহিনীকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, অন্যথায় তাদের কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ‘শান্ত বাহিনী’ ও ‘আলম বাহিনী’র ১৪ জন ডাকাত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে শান্ত বাহিনীর প্রধান মো. বারেক তালুকদার শান্তসহ (৪৮) তার বাহিনীর ১০ জন এবং আলম বাহিনীর প্রধান মো. আলম সরদারসহ (৩৪) চার সদস্যের আত্মসমর্পণকে স্বাগত জানান।
বাকি জলদস্যুরাও খুব শিগগিরই আত্মসমর্পণ করবে বলে আশা প্রকাশ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, তারা এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে দস্যুরা ৯টি বিদেশি ওয়ান ব্যারেল পিস্তল, বিদেশি দু’টি দুই ব্যারেল পিস্তল, দু’টি কাটা রাইফেল, ৫টি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশি এয়ার রাইফেলসহ ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৮শ’ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকারের গুলি জমা দেয়।
শান্ত বাহিনীর আত্মসমর্পণকৃত দস্যুরা হলেন, মনির হাওলাদার (৪৫), দুলাল মোল্লা ভান্ডারি (৪০), ফরিদ হাওলাদার (২৬), আনিসুর রহমান মোল্লা (৩৫), বশির আহমেদ শেখ (৪৭), ফরিদ গাজী (৩৮), মোস্তফা শেখ (৪৬), নূরুল ইসলাম (৪৪) ও খোরশেদ শেখ (৫২)।
আলম বাহিনী থেকে আত্মসমর্পণ করেন হালিম গাজী (২৬), আবু বকর সিদ্দিক (২৭) ও মো. আসাদুজ্জামান (১৮)।
তারও আগে গত ৩১ মে ও ১৪ জুলাই যথাক্রমে মাস্টার বাহিনীর ১০ জন এবং মঞ্জু ও ইলিয়াস বাহিনীর ১১ দস্যু আত্মসমর্পণ করে। এসময় মাস্টার বাহিনী ৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ৪ হাজার রাউন্ড গুলি এবং মঞ্জু ও ইলিয়াস বাহিনী ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ২০ রাউন্ড গুলি জমা দেয়।
বিবার্তা/রোকন/কাফী