জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) লোক প্রশাসন বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক পদে ছাত্র শিবিরের এক কর্মীকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই পদের জন্য তুলনামূলক ভালো ফলাফলধারী থাকলেও তাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে বঞ্চিতদের অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। তবে এ অভিযোগের ভিত্তিতে জাবি কর্তৃপক্ষ তার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখছে বলে জানানো হয়েছে।
আবু সাইফ মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম পুলক নামের ওই নিয়োগপ্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনি হলের সম্প্রসারিত ভবনে থাকার সময় শিবিরের সাথে তার সম্পৃতক্ততার অভিযোগ উঠেছিল। তিনি লোক-প্রশাসন বিভাগের ৩৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আবেদনকারীদের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্নাতকে ৩.৫৪ সিজিপিএসহ নবম এবং স্নাতকোত্তরে নন থিসিস গ্রুপে (অভিসন্দর্ভ/ গবেষণাপত্র ছাড়া) ৩.৮০ সিজিপিএসহ প্রথম হন পুলক।
অন্যদিকে পুলকের তুলনায় স্নাতকে ৩.৮১, ৩.৬৮, ৩.৭০ এবং যথাক্রমে স্নাতকোত্তরে ৩.৮৭, ৩.৯৪, ৩.৮০ সিজিপিএসহ আবেদনকারীও ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবেদনকারী বলেন, এভাবে নন থিসিসধারীদের নিয়োগ দিলে বিভাগে থিসিস রাখারই বা দরকার কী? পুলকের তুলনায় আবেদনকারী অধিকাংশের ফলাফল ভালো, তারপরও পুলককে কেন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে তা বুঝতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে যেসব শিবিরকর্মীকে শনাক্ত করে বের করে দেয়া হয়, তার মধ্যে আল বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের পুলকও ছিলেন।
লোক প্রশাসন বিভাগের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, পুলকের সঙ্গে বিভাগের সভাপতি ছায়েদুর রহমানের সখ্য রয়েছে। তারা যৌথভাবে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও এনআইএলডির অধীনে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশে কাজ করেছেন।
সাবেক সহকারী প্রক্টর ছায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে লোকপ্রশাসন বিভাগে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল।
তবে ছায়েদুর রহমান বলেন, সিলেকশন বোর্ডে যে ভালো পারফরমেন্স করেছে, তাকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তু নিয়েছে বোর্ড। আমার সাথে যদি কোনো প্রার্থীর সখ্য থাকলে সিলেকশন বোর্ড থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমি তার নাম প্রকাশ করব কেন?
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর থাকাকালে আমরা তার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তাছাড়া প্রথম প্রার্থী শিক্ষকতায় আসতে না চাওয়ায় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রার্থী মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় বোর্ড পুলককে নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। তার বিষয়ে জানার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খবর নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে কি না জানতে পুলকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শিবির করতাম এই বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য এবং বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। যেহেতু আমি শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না, তাই এটা প্রমাণের বা প্রতিবাদ করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক সোহেল পারভেজ বিবার্তাকে বলেন, পুলকের রুমে শিবিরের বই পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি শিবিরের সাথে তার সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। আমরা গিয়ে তাকে আর কোনোদিন হলে পাইনি। আবার তার নামে যে অভিযোগ উঠেছিল সে বিষয়ে কোনো প্রতিবাদও করেনি। সে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন বা অন্য কোনো সংগঠন করে তাও বলেনি।
উল্লেখ্য, লোক প্রশাসন বিভাগে দুইজন স্থায়ী এবং একজন অস্থায়ী প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিলেকশন বোর্ডের সভায় পুলককে অস্থায়ী প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এটি অনুমোদনের জন্য সিন্ডিকেট সভার অপেক্ষায় রয়েছে।
বিবার্তা/তাহের/কাফী