রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা।
ময়নাতদন্ত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আমরা সন্দেহ করছি বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছি ঢাকায়। ভিসেরা রিপোর্টের জন্য একটু অপেক্ষা করতে লাগবে। কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমীর জাফর বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময়ও শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার দুপুরে আকতার জাহানের ভাই কামরুল হাসান রতন লাশ গ্রহণ করেন।
রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোশাররফ হোসেন জানান, দুপুরে শিক্ষক আকতার জাহানের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় তার ভাই কামরুল হাসান, মামাতো ভাই শামিম হোসেন রানা ও ইকবাল হোসেনসহ সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক আকতার জাহান রাবির জুবেরি ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একাই থাকতেন। শুক্রবার বিকেলে এই কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কক্ষে তার একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া যায়। তার লাশ ঢাকায় পরিবারের কাছে না দিয়ে রামেক হাসপাতালে দিয়ে দেয়ার জন্য তিনি সুইসাইড নোটে লিখেছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আকতার জাহানের ভাই কামরুল হাসান রতন সাংবাদিকদের বলেছেন, তার মা অসুস্থ। তিনি চান না মেয়ের লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেয়া হোক। সেজন্য লাশ ঢাকায় নেয়া হচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাতিল সিরাজ জানান, শনিবার বিকেল ৪টায় রাবিতে শিক্ষক আকতার জাহানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই তার স্বজনরা লাশ ঢাকায় নিয়ে যাবেন।
কয়েক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় শিক্ষক আকতার জাহানের। এরপর থেকে তিনি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন। তার সাবেক স্বামী রাবির একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদ। তিনি তার বিভাগের ছাত্রী সোমা দেবকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সোমা দেবও রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
শিক্ষক আকতার জাহান তার সাবেক স্বামীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে- সে যে কোনো সময় সন্তানকে মেরে ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’
বিবার্তা/রিমন/নিশি