শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমরা যতই মানসম্মত শিক্ষার কথা বলি না কেন, আমাদের শিক্ষার মান ভালো করতে হলে শিক্ষকদের মান ভালো করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর পরই ১০ লাখ শিক্ষকের বিভিন্ন পদ্ধতির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রবিবার দুপুর ১টায় পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাদশ শ্রেণীর নবীনবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কথা আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন না ভুক্তভোগী অভিভাবকরা। আমাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের অভিযোগের কথা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে থেকে জানতে হয়। তাই সব অনিয়মকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা আমরা জানতে পারি না।
এর আগে জাতীয় পার্টির নেতা জামাল রানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন শিক্ষকদের নানান হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমার ছেলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। তাকে ওই স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়।
তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে ৮টা, ৮টা থেকে ৯টা, ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ে তাকে আবার স্কুলের ক্লাস করতে হয়। ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে আবার সেসব পড়া পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। এতে করে আমার সন্তানের মতো হাজার সন্তান অশান্তির মধ্যে দিন পার করছেন। আমরা শিক্ষা নামক এমন অশান্তি থেকে মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের পাশাপাশি আমাদের অভিভাকরাও এর জন্য কম দায়ী নয় । তারা ভাবেন বেশি বেশি টিউটরের কাছে পড়ালে তার ছেলে ভালো ফল অর্জন করবে। তাই তারা এ ব্যাপারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে গর্ববোধ করেন।
সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষক ছিলেন সাইফুর রহমান । যার একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে, যার নাম সাইফুর’স। যেটি কিনা শিক্ষার পাশাপাশি কিভাবে চোর হতে হয় সেটিও শিক্ষা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইনে অর্থ চুরির সময় এই কোচিং সেন্টারকে এমন চোর বানানোর মুখরোচক বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা গেছে। সেমসয় তো দেশের কোনো সুশীল এর প্রতিবাদ করেননি। আবার এই সাইফুর রহমানকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথিও করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা খাতের বাজেট পর্যাপ্ত নয়। তাই চাইলেই আমরা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট নিরসন করতে পারছি না। শিক্ষকদের বেতনও দিতে পারছি না। যোগ্যতা থাকার পরও নানান জটিলতায় সম্মানিত শিক্ষকদের পদায়ন করা যাচ্ছে না। আবার পদায়ন করলে যারা বাদ পড়েন তারা হাইকোর্টে রিট করেন।’
তিনি বলেন, ‘এক রিটে আমাদের শিক্ষকদের পদায়ন স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষকদের পদায়নের জন্য সব প্রস্তুতি থাকলেও আদালতের জন্য শিক্ষকদের পদায়নও করতে পারছি না। এসব কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষক সম্মানিত পদ অধ্যাপক না হয়েই তার পেশাগত জীবন শেষ করতে হচ্ছে। এতে একজন শিক্ষক সামাজিক অবস্থানের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।’
অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নিতাই চন্দ্র সরকার, ঢাকা যু্বলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সরোয়ার হোসেন বাবু প্রমুখ।
বিবার্তা/আদনান/নিশি