সুখী এবং অসুথী মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি? একটি পার্থক্য তো সবাই জানে যে সুখী মানুষরা সুখী এবং অসুখী ব্যক্তিরা অসুখী। কিন্তু সুখে থাকা মানুষগুলোর কর্মকাণ্ড কেমন? অসুখী মানুষগুলোর চেয়ে তাদের কাজের পার্থক্য কোথায়?
এ সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে যদি সুখী এবং অসুখী মানুষের ১৫ টি বিষয় আপনি খেয়াল করেন।
ভালোবাসা এবং ভয়: সুখী মানুষরা বেশি ভালোবাসে এবং কম ভয় পায়। তাদের মাঝে ভালোবাসা বেশি। সুখে থাকার ব্যাপারটি তাদের ভালোবাসতে শেখায়। অন্যদিকে অসুখী মানুষরা সবকিছু নিয়েই ভয়ে থাকে। এমনকি তারা ভালোবাসতেও ভয় পায়।
মেনে নেয়ার ক্ষমতা: সুখী মানুষরা সবকিছু হাসি মেনে নেয়। তারা বেশ ধৈর্যশীল হয়ে থাকে। যেকোনো বিপদে তারা ভেঙ্গে না পরে ধৈর্য ধরে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু অসুখী মানুষদের মাঝে তুলনামূলকভাবে মেনে নেয়ার ক্ষমতা কম থাকে।
ক্ষমা: ক্ষমা মহৎ গুণ। তবে এটি তুলনামূলকভাবে সুখী মানুষদের মাঝে বেশি দেখা যায়। তারা সুখে থাকে বলেই সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। একইসঙ্গে তারা ভুলেও যায়। গৌতম বুদ্ধের মতে, ‘নিজের মধ্যে রাগ ধরে রাখা মানে হচ্ছে জ্বলন্ত কয়লা নিজের মাঝে রাখা যা প্রতিনিয়তই আপনাকে পোড়াবে।’ তাই নিজের মাঝে রাগ চেপে রাখলে আপনি কখনোই সুখী হতে পারবেন না।
সন্দেহ ও বিশ্বাস: মার্ক টোয়েন এর মতে, ‘যারা তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। হীনমন্য ব্যক্তিরাই এমন করে। অন্যদিকে মহৎ ব্যক্তিরা আপনাকে মহৎ হতে শেখায়।’ সুখীরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখে এবং চারপাশের সবাইকে বিশ্বাস করে। এটিই তাদের বিশেষ ক্ষমতা। সকলের প্রতি বিশ্বাসই তাদের সুখী রাখে। সন্দেহপ্রবণতা আর আত্মবিশ্বাসের অভাব মানুষের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করে।
জীবনে লক্ষ্য থাকা: জীবনের অর্থ খোঁজার মাঝেই প্রকৃত সুখ রয়েছে। জীবনের কোনো মানে না থাকলে কিংবা কোনো লক্ষ্য না থাকলে কখনোই সুখ আসবে না। ওয়ারেন ডায়ারের মতে, ‘জীবনে নিজের পছন্দমত কিছু করলে আপনার জীবরে প্রাচুর্য নিয়ে আসবে।’ অনেকেই জীবনে অর্থ উপার্জনে সফল হয় কিন্তু জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না। ফলে তাদের জীবনের অর্থবিত্ত থাকা সত্ত্বেও সুখ ধরা দেয় না। তাই সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে জীবনের মানে জানা এবং লক্ষ্য থাকা আবশ্যক।
প্রশংসা এবং সমালোচনা: কারো প্রশংসা করার মাঝেই আনন্দ রয়েছে। আপনি যদি কারো ভালো কাজের প্রশংসা করেন তবে এটি তাকে আরো ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করবে। অপরদিকে তার সমালোচনা করা হলে সে ভালো কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সুখী মানুষরা সবসময়ই ভালো কাজের প্রশংসা করে। অপরদিকে অসুখী মানুষরা অন্যের সমালোচনায় এবং পরনিন্দায় বেশি ব্যস্ত থাকেন।
সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া: সুখী মানুষরা কখনোই সমস্যাকে ভয় পায় না। তারা বরং একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তারা একে নতুন কিছু উদ্ভাবনের সুযোগ মনে করে।
অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা: গৌতম বুদ্ধের মতে, কোনো কিছু দেয়ার আগে যিনি দেন তিনি সুখী থাকেন, দেয়ার সময় শান্তিতে থাকেন এবং দেয়ার পর সেটা বহুগুণে বেড়ে যায়।’ সুখী মানুষা নিজের জন্য কিছু করে না। তারা সবসময়ই অন্যের জন্য কাজ করতে চায়। তারা এমন কিছু করতে চায় যা অনেকের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তারা নিজেদের সুখ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে।
প্রাচুর্যতা: সুখী মানুষের মন সবসময়ই ভালো চিন্তায় ভরপুর থাকে। তারা সুখশান্তির প্রাচূর্যে থাকেন।
বড় কিছুর স্বপ্ন দেখা: গোথের মতে, ‘স্বপ্ন না দেখলে বড় হওয়া সম্ভব নয়।’ সুখী মানুষ সবসময়ই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে অতিরিক্ত বাস্তবাদীতা আপনাকে কখনোই সুখী হতে দেবে না।
উদারতা ও নিষ্ঠুরতা: সুখী মানুষরা স্বাভাবিকভাবেই বেশ উদার হয়ে থাকেন। কিছু কিছু ব্যক্তি হয়তো নিষ্ঠুরতার মাঝেই সাময়িক আনন্দ খুঁজে পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকৃত শান্তি তারা খুঁজে পায় না। অন্যকে সাহায্যের মাঝেই প্রকৃত সুখ লুকায়িত।
কৃতজ্ঞতা: কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মাঝেই অনেকে সুখ খুঁজে পান। সুখী মানুষরা সব সময়ই অন্যের উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অপরদিকে অসুখী মানুষরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না বরং এর মাঝে স্বার্থ খুঁজে বের করে।
বর্তমানকে কাজে লাগানো: সুখী মানুষরা জানে কিভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হবে। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না থেকে বর্তমান সময়টাকেই কাজে লাগায়।
ইতিবাচকতা এবং নেতিবাচকতা: জীবনে যাই ঘটুক না কেন, সুখী মানুষরা সবসময়ই হাসিমুখে তা মোকাবেলা করে। সবকিছুকে ইতিবাচকভাবে নেয় বলেই তারা সবসময় সুখে থাকতে পারে। নেতিবাচকভাবে কোনোকিছু চিন্তা করলে আপনি কখনোই সুখী হতে পারবেন না।
দায়ভার স্বীকার করে নেয়া: সুখী মানুষরা সবসময় নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজের দায়ভার স্বীকার করে নেয়ার মাঝেই তারা সুখ খুঁজে নেয়।
বিবার্তা/জিয়া