বহু ভাষায় পারদর্শীদেরকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানী বা গবেষকদের আগ্রহের শেষ নেই। নানাভাবে তাদের এই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারার দক্ষতার সাথে প্রাত্যহিক জীবনকে সংযুক্ত করতে চেয়েছেন সবাই। পেয়েছেন অনেক অবাক করা ফলাফল। বহু ভাষায় পারদর্শী মানুষেরা হয়ে থাকেন অনেক বেশি ধৈর্য্যশীল, সহনশীল ও খোলা মনের অধিকারী। তবে সম্প্রতি একটি ভিন্ন গবেষণায় জানান যায় যে এই অনেকগুলো ভাষায় কথা বলতে পারার চমৎকার ক্ষমতা মানুষকে যেমন নানা ইতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত করে, তেমনি বদলে দেয় তার ব্যক্তিত্বকেও।
২০০১ থেকে ২০০৩ সালের ভেতরে ভাষাবিদ জেন মার্ক দাওয়ালে ও আনিতা পাভলেনকো প্রায় ১০০০ জন বহুভাষায় পারদর্শী মানুষের ওপর একটি পরীক্ষা চালান। আর এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া দুই-তৃতীয়াংশই মনে করেন, নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলার সময় তাদের আবেগ, কথা বলার ভঙ্গী ও পছন্দগুলো পরিবর্তিত হয়।
তবে এটা কেবল গবেষণালব্ধ জ্ঞানই নয়, বাস্তব জীবনেও আপনি পাবেন এই বিষয়টির সত্যতা। নিউ রিপাবলিকের সম্পাদক নোয়াম শেইবার বহু ভাষায় কথা বলতে পারদর্শী। তবে তার তিন বছর বয়স্ক শিশুর সাথে হিব্রুর চেয়ে ইংরেজিতেই কথা বলতে ভালোবাসেন তিনি। কারণ নোয়ামের মতে, হিব্রু তার আচরণে এক ধরনের শীতলতা এনে দেয়। তিনি এমনটা শীতল আচরণ তার সন্তানের সাথে করতে চান না।
১৯৬৪ সালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজান এরভিন একটি গবেষণা চালান একের অধিক ভাষায় পারদর্শী মানুষদের ভেতরে। তাদেরকে একটি গল্পের অর্ধেক দিয়ে সেটাকে শেষ করতে বলেন তিনি। ভাষা হিসেবে এক্ষেত্রে বেছে নেয়া হয় ইংরেজি আর ফ্রেঞ্চে পারদর্শী মানুষদেরকে। ফলাফল দেখা যায়, ইংরেজি আর ফ্রেঞ্চে লেখা গল্পগুলো পুরোটাই আলাদা। ফ্রেঞ্চের ক্ষেত্রে বন্ধুর প্রতি উগ্র মনোভাব দেখানোর চেষ্টা করেছেন সবাই। তবে ইংরেজি ভাষায় লেখা ব্যক্তিরা বন্ধুর বদলে নারীদের ওপরে বিরূপ ধারণা পোষণ করে গল্পগুলোর ইতি টেনেছেন। বাস্তবে অনেক সময় বহুভাষাবিদ মানুষেরা একটি ভাষায় বন্ধুসংখ্যা বাড়াতে না পারলেও অন্য ভাষায় সেটা সহজেই পেরে যান।
ভাবছেন, কেন এমনটা হয়? বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন গবেষকেরা এই ব্যক্তিত্ব বদলে যাওয়ার পেছনে।
প্রথমত, একটি ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ অন্য আরেকটি ভাষা থেকে একেবারেই আলাদা হয়। আলাদা হয় সেগুলো বলার মেজাজ আর কণ্ঠের ওঠানামা। ফলে এই অন্যরকম হওয়ার বিষয়টি প্রভাব ফেলে সেই ভাষা যে ব্যবহার করছে তার ওপরেও। কারণ, ঐ ভাষার ভেতরেই পুরোটা ব্যাপার নিহিত থাকে।
দ্বিতীয়ত, এটা অনেকটা নির্ভর করে আমরা কোন বয়সে ভাষাটা শিখেছি, কোন পরিবেশে শিখেছি আর কতটা শিখেছি তার ওপরেও। আপনার ভাষা শেখার সময় যদি হয় নেতিবাচক তাহলে তার প্রভাব সেই ভাষা ব্যবহারের সময় আপনার ভেতরে থাকবেই। এছাড়াও অল্প শিক্ষা দিয়ে নিশ্চয় ভালোভাবে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে পারবেন না আপনি।
সবশেষে, প্রত্যকটি ভাষার ভেতরে মিশে থাকে সেই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষগুলোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আর সেই ভাষা ব্যবহারের সময় তাই ভাষার সাথে মিশে থাকা ঐতিহ্যকে অবহেলা করতে বা ছাঁটাই করে দিতে পারবেন না আপনি। বেছে নিতে হবে দুটোকেই। যার ফলে বদলে যাবে আপনার ব্যক্তিত্বের ধরন।
বিবার্তা/জিয়া