অনেক মানুষের কাছে একটি বিশেষ গন্ধ কেবল সুগন্ধী নয়, তা একটি স্মৃতি। চকোলেট দেয়া কুকির গন্ধ পেলে আপনার মনে পড়বে, ছোটবেলায় মা রান্নাঘরে মজার কেক বানাচ্ছেন। যখন হঠাৎ করে নাকে মাটির গন্ধ আসে, তখন মনে পড়ে ছোটবেলা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
বিজ্ঞান বলছে এসব গন্ধ আমাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে যে অংশটি, তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই নাকে খুব সামান্য কোনো গন্ধ এসে ঠেকলেই তার সঙ্গে স্মৃতি বিজড়িত কোনো ঘটনায় আমরা হারিয়ে যাই। এসব গন্ধের বাইরেও বেশ কিছু গন্ধ আছে যা আমাদের দেহ ও মনের জন্য দারুণ কাজ করে। মানসিক চাপ থেকে শুরু করে মাথাব্যাথা পর্যন্ত দূর করতে পারে নানা গন্ধ। এখানে ১১টি গন্ধের কথা বলা হলো যা মানব দেহের নানা উপকার করতে পারে।
ল্যাভেন্ডারের গন্ধ ঘুম আনে: এই গন্ধটি একেবারে সঙ্গে সঙ্গে দেহমনে শান্তির পরশ বুলায় এবং আরাম এনে দেয়। সম্ভবত এটি ইনসমনিয়ার জন্য দারুণ উপকার এনে দেবে। কলেজপড়ুয়া ৪২ জন নারীকে নিয়ে এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ তাদের ঘুমের সমস্যা দূর করেছে এবং তাদের উত্তেজনা প্রশমিত করেছে।
মনটাকে ঝরঝরে করে দেয় দারুচিনির গন্ধ: এটাই সম্ভবত সবচেয়ে আরামদায়ক গন্ধ। তা ছাড়া মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এর মিষ্টি গন্ধ। হুইলিং জেসুইট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা করে দেখেন, দারুচিনির গন্ধ মগজের ভিজুয়াল মোটরের কাজ দ্রুত করে দেয়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মনযোগ আনে।
ধকল উপশম করে পাইনের গন্ধ: খ্রিস্টানদের উৎসবের দিনেই শুধু পাইন গাছ কাজে লাগে তা নয়, এর আরেকটি কাজ হলো মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা প্রশমিত করে এ গাছের গন্ধ। এসব তথ্য জানান এক দল জাপানি গবেষক। তারা পরীক্ষায় দেখেছেন, অত্যন্ত মানসিক চাপে থাকা মানুষদের মধ্যে পাইনের গন্ধ ছড়িয়ে দেয়ার পর তারা অনেক সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন।
সদ্য কাটা সবুজ ঘাসের গন্ধে আসে আনন্দ: মাঠের বা উঠোনের সদ্য কাটা কাঁচা ঘাসের গন্ধ মনে অহেতুক আনন্দ এনে দেয়। এই গন্ধ বয়সের ভারে ক্রমশ ভোঁতা হয়ে যাওয়া মনকে করে তোলে প্রফুল্ল।
লেবু জাতীয় ফলের গন্ধ শক্তির উৎস: লেবু, জাম্বুরা বা কমলার গন্ধে দেহমনে এক ধরনের শক্তি চলে আসে। ঠিক এক কাপ কফি খেলে যেমন চাঙা হয়ে ওঠে দেহমন। ভিটামিন সি পরিপূর্ণ এসব ফলের গন্ধ বেশ শক্তিবর্ধক।
ভ্যানিলা ভালো করে দেয় মুড: ভ্যানিলা খেতেও মজা, আবার এর গন্ধে নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে আপনার মুড। এর গন্ধে অনেকটা সুখানুভূতি হয়। ভ্যানিলা বিষয়ক এক গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন প্রকাশ হয় প্রসিডিংস অব আইএসওটি/জেএএসটিএস ২০০৪-এ। অংশগ্রহণকারীদের মুড ম্যাপিং করা হয়। দেখা যায়, ভ্যানিলার গন্ধে তার মনে আনন্দ ও সুখ বোধ হচ্ছে।
কুমড়োর গন্ধে কামোত্তেজনা: দ্য স্মেল অ্যান্ড টেস্ট ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ শতাংশ পুরুষ কুমড়োর গন্ধে কামোত্তেজনা বোধ করছেন।
মরিচের গন্ধে একাগ্রতা: হুইলিং জেসুইট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, মরিচের গন্ধ স্টেমিনা বাড়ায়, প্রেরণা আনে এবং সব মিলিয়ে যেকোনো কাজে একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। এর গন্ধ নাক দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্কের মনযোগ নিয়ন্ত্রণ করে যে অংশটি, সেখানে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
জুঁইয়ের গন্ধ বিষণ্নতা কমায়: জুঁইয়ের নান্দনিকতার উপাখ্যান আর বলার প্রয়োজন নেই। তবে নতুন তথ্যটি হলো, জুঁইয়ের সুমিষ্ট গন্ধ মনের বিষণ্নতা দূর করে দেয়। এক গবেষণায় এও বের হয়ে আসে যে, জুঁই থেকে নির্যাস নিয়ে তার ব্যবহারে বিষণ্নতাঘটিত সমস্যা দূর হয় এবং মন অনেক হালকা হয়ে ওঠে। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এর গন্ধ মনে এক ধরনের সাবধানতা তৈরি করে যা ভোঁতা অনুভূতি দূর করে দেয়।
আপেলের গন্ধে মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম: একটি প্রবাদ আছে, এক দিনে একটি আপেল চিকিৎসককে দূরে রাখে। ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপেলের গন্ধ এক দল মানুষের মাইগ্রেনের ব্যথা কমিয়ে দিয়েছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, সবুজ আপেলের গন্ধ মানসিক চাপে বিপর্যস্ত মনে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে।
অলিভ ওয়েল খাবারে তৃপ্তি আনে: খাবারে অলিভ ওয়েল ব্যবহারে আমাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যায় এবং হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর ফুড ক্যামেস্ট্রির এক গবেষণায় দেখা যায়, অলিভ ওয়েল দিয়ে তৈরি খাবার এক ধরনের তৃপ্তি আনে। অন্যান্য তেল ব্যবহার করে তৈরি খাবারে তা আসে না। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, এই তেলের গন্ধ অন্যান্য খাবারের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতেও অলিভ ওয়েল বেশ কার্যকর।
বিবার্তা/জিয়া