মশা আকৃতিতে বেশ ছোট হলেও পৃথিবীর ভয়ংকরতম প্রাণির একটি। এই মশার কামড়ে হতে পারে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ। প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনোভাবে মশার আক্রমণের শিকার হই। কেউ বেশি আর কেউ কম। কিন্তু মশা সবাইকে একভাবে আক্রমণ করে না। কিছু কিছু মানুষকে মশা খুব বেশিই উৎপাত করে। ব্যাপারটা গবেষণা থেকে প্রমাণিত। আর এর কারণ হলো মানুষের ডিএনএ।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু মানুষের পায়ের গন্ধ মশাকে আকৃষ্ট করে সুগন্ধি পনিরের মতো। এর মানে এই নয় যে আপনার পা ময়লা। বরং আপনার ডিএনএ-র জন্যই মশাদের কাছে আপনি উৎকৃষ্ট একটি খাবার। টাইপ ও রক্ত থাকলে এবং গর্ভাবস্থায় অবশ্য মশা স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশি কামড়ায়, তার ডিএনএ যেমনই হোক।
লন্ডনের গবেষকেরা সম্প্রতি মশাদের এই আকর্ষণের পেছনে জেনেটিক কারণ উদঘাটন করতে আটঘাট বেঁধে লাগেন। ১৮ জোড়া আইডেন্টিকাল এবং ১৯ জোড়া ফ্র্যাটারনাল যমজ নারীকে এই গবেষণায় নেওয়া হয়। কিছু পরীক্ষায় ২০টা করে মশাকে ছেড়ে দেয়া হয় একজোড়া যমজের যে কোনো একজনকে কামড়াতে। ৩৭ জোড়া যমজের ওপর গবেষণার শেষে দেখা যায়, আইডেন্টিকাল টুইনদেরকে মশারা মোটামুটি একই পরিমাণে কামড়ায়।
কিন্তু ফ্র্যাটারনাল টুইন অর্থাৎ যাদের ডিএনএতে পার্থক্য থাকে, তাদের প্রতি মশার আকর্ষণটাও হয় ভিন্ন। মোটামুটিভাবে একজন মানুষকে পোকা কতটা উত্যক্ত করবে তার ৬৭ শতাংশ নির্ভর করে তার জিনের ওপর। তারমানে কী, ডিএনএ -এর দোষে আমাদের শরীর মশা আকৃষ্ট করার গন্ধ উৎপাদন করে? না, ব্যাপারটা আরেকটু মজার।
ডিএনএ আকৃষ্ট করে বিশেষ কিছু মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াকে। এসব ব্যাকটেরিয়া আবার মশাকে আকৃষ্ট করে আমাদের শরীর পর্যন্ত। শুনে গা গুলিয়ে উঠল বুঝি? তাহলে শুনুন, প্রতিটি মানুষ এই মুহূর্তে ১০০ ট্রিলিয়ন অণুজীবে আবৃত হয়ে আছে। এর পরিমাণ আমাদের মোট ডিএনএ এর চাইতে ১০ গুণ বেশি। আমাদের প্রত্যেকেরই শরীরের এই জীবাণুর সমষ্টি অর্থাৎ ‘মাইক্রোবায়োম’ আলাদা। এর কারণে একেক মানুষের শরীরের গন্ধ একেক রকমের হয়।
একেক ধরণের মশা শরীরের একেক অংশের গন্ধ পছন্দ করে। এডিস গ্যাম্বি নামের ম্যালেরিয়া ছড়ানো মশাটি হাত ও পায়ে কামড়াতে পছন্দ করে। কেউ কেউ আবার সোজা বগল এবং কুঁচকির ত্বক আক্রমণ করে। ঠিক কী করে এই বিপত্তি এড়াবেন আপনি? আপনিও যদি এমন কেউ হন যাকে মশারা বিশেষভাবে পছন্দ করে, তাহলে আপনি করতে পারেন কিছু কাজ-
> DEET, লেমন ইউক্যালিপটাস অয়েল, icaridin অথবা IR3535 এসব রিপেলেন্ট দিয়ে এদেরকে দূরে রাখতে পারেন
> পারমাথ্রিন নামের রাসায়নিকযুক্ত পোশাক পরতে পারেন যা মশাকে দূরে রাখে
> ত্বক শুষ্ক রাখুন যতটা সম্ভব, উষ্ণ ও ঘর্মাক্ত ত্বক মশাকে আকৃষ্ট করে।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি