একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আসলেই কী আপনার মেজাজের ওপর পোশাক কোনো প্রভাব ফেলে? রঙ্গিন পোশাক পরলে মনটা যেন একটু ফুরফুরে মনে হয়, কালো বা চাপা রঙের কোনো পোশাক পরলে আবার মেজাজটা যেন থমথমে হয়ে থাকে।
পরিপাটি পোশাক পরলে যেমন চিন্তাভাবনাও পরিষ্কার থাকে, তেমনি ময়লা, কোঁচকানো পোশাকে চিন্তাভাবনা হয়ে যায় এলোমেলো। হ্যাঁ, আমাদের মেজাজের ওপর পোশাকের এসব প্রভাব আসলেই খাটে। আর অন্যরা যে আমাদের পোশাক দেখে আমাদের ব্যাপারে ধারণা করে নেয় তা তো বলাই বাহুল্য। চলুন আরও ভালো করে জেনে নেই এই ব্যাপারে।
মানসিকতাকে করে তোলে শক্তিশালী: কখনো খেয়াল করেছেন ফর্মাল পোশাকে ধোপদুরস্ত হয়ে ইন্টার্ভিউ দিতে গেলে যেন বুকে একটু বেশি বল পাওয়া যায়? এটা গবেষণাতেও প্রমাণিত। ফর্মাল বিজনেস স্যুট পরে ধারাবাহিক পাঁচটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন যারা, তাদের মনোবল বেশি হয়, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে তাদের তুলনায় যারা পোশাক আশাকের ব্যাপারে তেমন মনোযোগী ছিলেন না। এছাড়া তারা দ্রুত চিন্তা করতে এবং সৃজনশীল আইডিয়া তৈরি করতেও বেশি পারদর্শী থাকেন। এছাড়াও আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারম্যানের পোশাক পরা নারী ও পুরুষ নিজের ব্যাপারে বেশি আত্মবিশ্বাসী আচরণ করে।
ব্যায়ামে সাহায্য করতে পারে: ২০০৪ অলিম্পিক গেমস থেকে দেখা যায়, লাল পোশাকের খেলোয়াড়েরা নীল পোশাকের খেলোয়াড়দের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে একটা গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায় আসলেই যারা লাল পোশাক পরেন তারা বেশি ভারি ওজন তুলতে পারেন এবং তাদের হার্ট রেট বেশি হয়। আর ব্যায়ামের পোশাক পরলে আসলে ব্যায়াম করতেও ইচ্ছে হবে আপনার। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আগে ব্যায়ামের পোশাক পরে ফেলুন। দেখবেন এমনিতেই আপনার ব্যায়াম করতে ইচ্ছে হবে।
বুদ্ধিমান করে তোলে: বুদ্ধিমান মানুষের প্রতীক কী? চিন্তা করে দেখুন, আপনার বুদ্ধিমান বন্ধুটি হয়তো একজন ডাক্তার, তাই সে একটা ল্যাব কোট পরে। এ কারণে কারও গায়ে ল্যাব কোট দেখলে আপনি তাকে গড়পড়তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বলেই ধরে নেবেন। শুধু তাই না, এই ‘স্মার্ট’ পোশাক গায়ে চড়ালে আপনার কাজেকর্মেও বুদ্ধির উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে। গবেষকেরা সাধারণ কিছু মানুষকে ল্যাব কোট পরতে দেন এবং তাদেরকে কিছু কঠিন কাজ করতে দেন। যারা কোট পরে ছিলেন তাদের ফলাফল ভালো হয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, সুইমসুট পরে একটি গণিতের পরীক্ষা দিতে গেলে তারা সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করে।
কাজে ফোকাস করা সহজ হয়: অনেক কাজ আছে যাতে মনোযোগ ধরে রাখাটাই কার্যকর। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে ফোকাস করতে সাহায্য করতে পারে আপনার ফিটফাট পোশাক। ল্যাব কোটের একই পরীক্ষায় দেখা যায়, কোট পরা মানুষের মাথায় থাকে যে একজন ডাক্তার খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন, তাই ডাক্তারের কোট পরে থাকা মানে তাকেও এমন মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। এই অবচেতন চিন্তা থেকেই তারা মনোযোগ ধরে রাখেন অনেক বেশি।
দরাদরি করতে সাহায্য করে: দামাদামি করতে বিরক্তি অনেকেরই। কিন্তু দামাদামির ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারেন আপনি, সঠিক পোশাকের বদৌলতে। দেখা যায়, দামাদামি করার সময়ে যারা পরিপাটি পোশাকে থাকেন, তারা বেশ জোর দিয়ে দামাদামি করতে পারেন অন্যদের তুলনায়।
মন ভালো করে দিতে পারে: আপনি কি নিজের মেজাজের ওপর নির্ভর করে পোশাক পরেন, নাকি মেজাজ পরিবর্তন করার জন্য পোশাক পরেন? বেশিরভাগ সময়ে আমরা মন খারাপ থাকলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখি এবং উজ্জ্বল পোশাক পরি যাতে কেউ বুঝতে না পারে আমাদের মন খারাপ। এই জিনিসটা শেষমেশ কিন্তু আমাদের মনও একটু ভালো করে দিতে পারে। বিশেষ করে সেই পোশাকের সাথে যদি ভালো কোনো স্মৃতি জড়িয়ে থাকে, বা এর কারণে আমাদের প্রশংসা করে, তাহলে মন ভালো হয়ে যায় একটু একটু করে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা বিষণ্ণ তারা অনেক ক্ষেত্রেই নিজের পোশাকের ক্ষেত্রে একেবারেই মনোযোগ দেন না।
ওজন কমাতে পারে: আঁটসাঁট জিন্স পরা, আগের চেয়ে একটু টাইট করে বেল্ট পরা, এমনকি কোমর জড়িয়ে একটা ফিতে বাঁধাটাও আপনার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে। এই আঁটসাঁট পোশাক আপনার অবচেতন মনকে বোঝায় যে আপনার ওজন কমানো উচিত, আরেকটু কম খাওয়া উচিত, পেট ভরে গেলেই খাওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত। অনেক ফ্রেঞ্চ নারীরা পোশাকের নিচে একটা রিবন বেঁধে বাইরে খেতে যান, রিবন যদি আঁটো মনে হয় তাহলে সাথে সাথে তারা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যান।
বিবার্তা/জিয়া