ঘ্রাণশক্তি মানুষের অন্যতম ইন্দ্রিয় শক্তি। প্রাচীন কাল থেকে আমাদের নিরাপদে রাখার জন্য অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের পাশাপাশি আমাদের নাক বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষ দূর থেকেই খাবারের স্বাদ ও কিছু ঘটে বিপদের আন্দাজ করতে পারে। তাই এই আধুনিক জীবনে আপনাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে কাজ করতে পারে এই নাক। বিভিন্ন প্রাণীর মতো অতটা তীক্ষ্ণ না হলেও মানুষের, বিশেষ করে নারীদের ঘ্রাণশক্তি অনেক তীক্ষ্ণ। অনেক সময় বাড়িতে নানা বিপদ দেখা দেয়, সেই বিপদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আগেই আপনি ঘ্রাণ থেকে বুঝে নিতে পারেন। চলুন দেখে নেই, বাড়িতে কী কী গন্ধ পেলে আপনার সতর্ক হওয়া উচিৎ।
ধোঁয়া বা পোড়া গন্ধ
খাবার পোড়ার গন্ধের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু অল্প অল্প ধোঁয়ার গন্ধ, বা কোনো কিছু পোড়ার একদম সূক্ষ্ম গন্ধকে আমরা খুব একটা আমলে আনি না। একটু খেয়াল করে দেখুন, বিশেষ কোনো ইলেকট্রনিক্স চালানোর সময়ে, যেমন ফোন চার্জ দেবার সময়ে বা ফ্যান ছাড়ার সময়ে যদি এই গন্ধ পান তাহলে তা খুব বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ এটা প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ হতে পারে। খুব দ্রুত ইলেক্ট্রিশিয়ান ডেকে সমস্যার সমাধান করুন।
গ্যাসের গন্ধ
প্রতি বাড়িতিই গ্যাসের চুলা আছে। আর গ্যাসের চুলো লিক করে প্রায়ই মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটার খবর পাই আমরা। নিজের নাম এমন একটি খবরের শিরোনামে দেখতে না চাইলে আপনি সতর্ক থাকুন। গ্যাসের গন্ধ পেলেই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ুন এবং গ্যাস কোম্পানিকে ব্যাপারটা জানান। কেননা, গ্যাসের পাইপে লিক থাকতে পারে।
ভ্যাপসা গন্ধ
ভ্যাপসা, স্যাঁতস্যাঁতে দুর্গন্ধের অর্থ হতে পারে সিঙ্ক অথবা পাইপের কোথাও ফাটা অথবা লিক তৈরি হয়েছে, যার ফলে পানি জমে শ্যাওলা পড়েছে। বাড়িতে অ্যাজমা অথবা অ্যালার্জির রোগী থাকলে তার জন্য এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। শ্যাওলা শনাক্ত করতে পারলে ব্লিচ এবং পানির মিশ্রণ দিয়ে জায়গাটা ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
টয়লেটের বাজে দুর্গন্ধ
আপনার বাসা যদি পাবলিক টয়লেটের মতো কটু দুর্গন্ধে ভরে থাকে তাহলে চিন্তিত হবারই কথা। এর কারণ হতে পারে সিউয়ার গ্যাসের লিক। এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস থাকে। সাধারণত বাড়িতে কোনো বাথরুম অব্যবহৃত থাকলে সেটা থেকে এই গ্যাসের লিক হতে পারে। তবে আপনি যদি এর উৎস খুঁজে না পান তাহলে মিস্ত্রী ডাকিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
বাসি সিগারেটের গন্ধ
আমরা জানি সিগারেটের গন্ধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে অসুস্থ হবার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু একটি ঘরে কেউ ধূমপান করে গেলে সেখানে যদি বাসি ধোঁয়া থেকে যায় সেটাও ক্ষতিকর। ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের ওপরে থেকে যায় সেই ধোঁয়ার অবশিষ্টাংশ, সেটাও আপনার জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে আপনার বাড়িতে কেউ ধূমপান করে গেলে সেই রুম পরে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
রঙের গন্ধ
ঘরের দেয়াল রং করা হলে একটা নতুন নতুন গন্ধ থাকে। এই গন্ধটাকে অনেকে পছন্দ করলেও এতে অনেক রকমের রাসায়নিক থাকে যা আপনার জন্য ক্ষতিকর। নিজের বাড়িতে এসব গন্ধ ছাড়াও, আপনি যদি বাসা ভাড়া নিতে বা কিনতে যান, তাহলে এসব গন্ধের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যদি ঘরে শুধু সুগন্ধি মোমবাতি, ধূপ অথবা এয়ার ফ্রেশনারের গন্ধ তাহলেও খুশি হবেন না। কারণ হয়তো সেই ঘরে কোনো একটা দুর্গন্ধ আছে যা এসব সুগন্ধের সাহায্যে ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে।
ভেজা লোমের গন্ধ
এই গন্ধটা অপরিচিত মনে হতে পারে। রাস্তার কুকুর-বিড়ালের শরীরের গন্ধ, অথবা গরু-ছাগলের গন্ধ যেমন হয় তেমন গন্ধ যদি বাসায় থাকে, অথচ আপনার কোনো পোষা প্রাণী নেই তাহলে খটকা লাগতেই পারে। এর কারণ হতে পারে ধাড়ি ইঁদুর অথবা বুনো বিড়াল। এগুলো হয়তো আপনার অজান্তেই ঘরে ঢুকে পড়ছে এবং খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে,। এমন গন্ধ পেলে ভালো করে আনাচে কানাচে খুঁজে দেখুন। কোনো প্রাণী পেলে তাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করুন। কেননা, এই গন্ধটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি