ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে টানা ১০ দিনের ভারিবর্ষণ আর বৈরী আবহাওয়ায় সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় দেখা দিয়েছে পাহাড়ি ঢল-সৃষ্ট অকাল বন্যা। এসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বানের পানি।
মঙ্গলবারও উপজেলা দুটির সবকটি হাওর, নিম্নাঞ্চল ছাড়িয়ে পানি ক্রমশ উজানের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কোথাও কোথাও জেলা শহর সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। রোপা বোরো ফসলের সিংহভাগই পানিতে ডুবে গেছে।
তবে উপজেলা কৃষি অফিসার আনিছুজ্জামান বন্যায় শতভাগ ফসল নষ্ট হয়নি বলে জানিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার কর্নী গ্রামের কৃষক হাবিব আহমদ, আলীর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, বন্যার পানি আমাদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও ফসল তুলতে পারছি না। এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে। তার মতো কষ্ট তোয়াকুলের বঙ্গবীরের রুস্তম আলীরও। আকস্মিক বন্যা হাওরের জমিতে রোপা পাকা ধানের কোনো অস্তিত্বই রাখেনি।
বানের পানির তোড়ে উপজেলা দুটির বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে জাফলং চা বাগান, নয়াগাঙ্গের পার, বাউরভাগসহ পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে গোয়াইনঘাটে একটি বন্যা তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সরেজমিন ল্যাংগুড়া, রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলংসহ বেশকটি বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, কয়েক দিনের ভারিবর্ষণে পাহাড়ি ঢল-সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাড়ছে বানের পানি। প্রতি মুহূর্তেই পানিবন্দী মানুষের খোঁজ-খবর রাখছি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা হিসেবে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছি। ত্রাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
জৈন্তাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম খালেদুর রহমান জানান, জৈন্তাপুরে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও অবনতি, আবার কোথাও উন্নতি হচ্ছে। ইতিপূর্বে আতঙ্কে অনেকে পরিবার নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে। উপজেলার ১নং নিজপাট ও ২নং জৈন্তাপুরের বন্যা উপদ্রুত সব এলাকা পরিদর্শন করেছি। উপদ্রুত সব এলাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
এদিকে গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, জেন্তাপুরের শ্রীপুর পাথর ও পফরিঘাটে বড়গাঙ্গ, সারীঘাট, লালাখালসহ সব কোয়ারিতে পাথর-বালি উত্তোলনের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা।
বিবার্তা/সাইফুর/নাজিম/কাফী