ময়মনসিংহে ট্রেনের সিংহভাগ টিকিটই কালোবাজারিদের দখলে।রেলওয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই দিনের পর দিন এ ব্যবসা করে যাচ্ছে টিকিট কালোবাজারিরা। এসব দেখার প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা আছেন তারাও নিয়মিত কমিশন নিচ্ছেন কালোবাজারিদের কাছ থেকে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ রোডে প্রতিদিন ৫টি আন্তনগর ট্রেন যাতায়াত করে। ময়মনসিংহের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট হরি গোপাল সেন জানান, ট্রেনওয়ারি ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ টিকিট যথাক্রমে আন্তঃনগর তিস্তা (৯৫), ব্রহ্মপুত্র (৬২), অগ্নিবীণা (৯৯), হাওড় এক্সপ্রেস (৫২) ও যমুনা এক্সপ্রেসসহ (১০৭)টি মোট ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে ৪১৫ টিকিট।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ টু চট্টগ্রাম যাতায়াত করে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ময়মনসিংহ-চট্রগ্রাম ২১৮টি টিকিট ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্ধ রয়েছে।এসব রোডের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জনা যায় ৫দিন আগে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট দেয়ার কথা থাকলেও টিকিট বিতরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয় টিকিট শেষ। কিন্তু পরে কালোবাজারীদের কাছে উচ্চ মূল্যে সেই টিকিট দিব্যি পাওয়া যায়।
এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে কালোবাজারি সিন্ডিকেট।এই সিন্ডিকেট রেলের টিকিট বাণিজ্য করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।সরেজমিনে ময়মসসিংহ ও গঁফরগাও রেল স্টেশন ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালোবাজারি দলের একাধিক সদস্য বিবার্তাকে জানান, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনভেদে ৮০ থেকে ১০০টি টিকিট ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্ধ থাকলেও কাউন্টার থেকে ৩০ থেকে ৪০টি টিকিটের বেশি দেয়া হয় না। বাকি টিকিট তারা রেলওয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারিদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০-৭০ টাকা বেশিতে সংগ্রহ করে যাত্রীদের কাছে ১০০-১৫০টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করে।
তারা আরও জানায়, ঈদ বা অন্য কোন জাতীয় উৎসবে টিকিটের চাহিদা যখন বেশি থাকে তখন মোটা অংকের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতে হয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের।পরে যাত্রীদের কাছে সেই টিকিট তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
কালোবাজারিদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায় গফরগাঁও এ রেলের যাত্রী বেশি থাকায় ময়মনসিংহ থেকে গফরগাঁও এর কালোবাজারিরা অবৈধ পন্থায় টিকিট সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ ও গফরগাঁও এর যাত্রীদের কাছে তিনগুণ দামে বিক্রি করে ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের নিয়মিত যাত্রী স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ বণিক বলেন, ‘ময়মনসিংহ রেলওয়ে কাউন্টারে টিকিটের জন্য গেলে বলা হয়, টিকিট শেষ। পরে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ মূল্য দিয়ে সেই টিকিট দালালদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।’
শহরের কাপড় ব্যবসায়ী মাসুদুল হক বলেন, ‘ঢাকার টিকিট ময়মনসিংহ থেকে না পেয়ে প্রায়ই গফরগাঁও স্টেশনের দালারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।’ ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে কি না এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট হরি গোপাল সেন বলেন, ‘আমিও আপনাদের মতো শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। তবে স্টেশনে একটি দালালচক্র রয়েছে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে দু-একটি টিকিট সংগ্রহ করে বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে। এদেরকে দমন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।’
সরেজমিনে গফরগাঁও স্টেশনের ঘুরে ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় স্টেশনের টিকিট কাউন্টার বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। ট্রেন আসার ১৫-২০ মিনিট আগে কাউন্টার খুললেও সিটযুক্ত টিকিট দেয়া হয় না।কাউন্টারের বাইরে প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনে ‘ঢাকা সিট ঢাকা সিট’ হাকিয়ে দালালদের টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়।এমনকি প্লাটফর্মের পান দোকান ও সেলুনেও ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয়।
কালোবাজারে টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে এখানে দালালদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়ে থাকে।এ বিষয়ে কথা বলতে গফরগাঁও স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি। ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিবার্তা/আনোয়ার/জিয়া