ঈদের ছুটি কাটাতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো পর্যটকদের ঢল নেমেছে। গুলশান ও শোলকিয়ায় জঙ্গি হামলার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দেশী-বিদেশী নানা বয়সের টুরিস্টদের আগমনে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে শনিবার দিনভর কুয়াকাটা সৈকতে ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আবাসিক হোটেল মোটেল, খাবার ঘর ও শপিংমলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে উম্মাদনায় নেচে গেয়ে সৈকতে বিচরণ করেছেন লাখো পর্যটক।
এ অবস্থা চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বিরাজ করবে বলে হোটেল-মোটেল মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আগত পর্যটকদের সবোর্চ্চ নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, র্যা বসহ কয়েক স্তরের নিরপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছে বলে উপজেলা ভারপ্রপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিপক কুমার রায় এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বাস, টেম্পু, প্রাইভেটকার, মাইক্রো যোগে দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করে।
স্থানীয় রাখাইন মার্কেট, নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী, লাল কাকড়ার চর ও সৈকতের জিরো পয়েন্টে শিশু কিশোর যুবক যুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারনায় এখন মুখরিত। এছাড়া ঈদের লম্বা ছুটিতে অধিকাংশ হোটেল মোটেলের সিট অগ্রীম বুকিং রয়েছে বলে একাধিক হোটেল মোটেল মালিকরা জানিয়েছেন।
কুয়াকাটার সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের বালিয়াড়িতে পাতা বেঞ্চ ছাতা নিচেসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নানা বয়সের মানুষ গল্প, গান আর আড্ডায় মেতে রয়েছে। ঘুরতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সাথে নতুন নতুন বন্ধুত্বের সুযোগে হাতের মোবাইল দিয়ে নানা ঢংয়ের সেলফি তুলে সাথে সাথে পোস্ট করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। আবার কেউ কেউ সৈকতে ফুটবল ও হাডুডু খেলায়ও মেতে রয়েছে। এছাড়া দ্রুতগামী স্পিড বোটগুলো উচ্চ শব্দ করে একের পর এক পর্যটক বোঝাই করে গভীর সমুদ্রে ছুটে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আবার সৈকতের একই স্থানে এসে নোঙ্গর করছে।
ঢাকার বে-সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো.রেজাউল করিম জনান, ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়িতে আসলাম। দীর্ঘ ছুটির কথা চিন্তা করে স্ত্রী, ছেলে, মেয়েদের নিয়ে কুয়াকাটায় আসলাম। কিন্তু আজকের কুয়াকাটা দেখে হতবাক হলাম। মনে হয় সাগরের ঢেউয়ের তান্ডবে সৈকত এখন বেহাল দশা। জরুরী বিক্তিতে কুয়াকাটা সৈকতের শ্রীবৃদ্ধি করলে সরকার এ খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অপর এক ব্যবসায়ী হাজী ইকবাল হোসেন ঢাকা থেকে স্ব-পরিবারে ঈদের অনন্দ উপভোগ করতে প্রথম বারের মত কুয়াকটায় আসেন। তিনি সৈকতে দাঁড়িয়ে বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে বিমোহিত হয়েছি। কঠোর নিরাপত্তা ও সড়ক যোগাযোগ ভাল থাকায় এ বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঈদের লম্বা ছুটিতে এখানে ছুটে এসেছেন।
জার্মানির মুসলিম নাগরিক মোহম্মদ আমিন ভাঙ্গা বাংলা ভাষায় জানান, এর আগেও কুয়াকাটায় এসেছি। এখানকার পরিবেশ খুবই ভাল। এ বছর এই কুয়াকাটায় ঈদ করেছি।
কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও জঙ্গিবাদকে উপেক্ষা করে কুয়াকাটায় প্রচুর পর্যটকদের সমাগম ঘটেছে। তার প্রষ্ঠিানেও বাড়তি চাপ রয়েছে। সামাল দিতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
অভিজাত আবাসিক হোটেল সিকদার রির্সোট এন্ড ভিলাজ’র জিএম জয়নুল আবেদীন জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এসেছেন। চলতি সপ্তাহ জুড়েই পর্যটরা থাকবে এমনটা আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া এখনও রুম বুকিং এর জন্য ফোন ও অনলাইলে বুকিং চলছে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ জানান, পর্যটকদের আগমনে এখানকার হোটেল মোটেল গুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। ঈদের ছুটি উপলক্ষে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত আগাম বুকিং রয়েছে। তবে এখনো অনেক পর্যটক রুম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর মসিউর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ দর্শনীয় স্থান গুলোতে টহলরত রয়েছে। পুলিশ ছাড়াও নিরপত্তার দায়িত্বে সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা কর্মীরা একযোগো কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) দিপক কুমার রায় জানান, পর্যটকদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় এজন্য সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ,নৌ-পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে। এছাড়া কুয়াকাটা সড়ক পথের তিনটি সেতুতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিবার্তা/উত্তম/জিয়া