গ্রামের নাম সোনাকুর। সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী ২নং ইউনিয়নের বাসিন্দা ওরা। ওই গ্রামের হতদরিদ্র্, সুবিধাবঞ্চিত ১৫টি বেদে পরিবারের বসবাস। সন্ধ্যা নদীর স্রোতের কলতানে ওদের ভাঙ্গে ঘুম। জোয়ারের পানিতে ওদের বাড়িতে হাঁটু সমান পানি।
কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে ওই পরিবারের শিশুরা যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাউখালী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে বেদে পরিবারের শিশুদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ ও খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিস্কুট দেন উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, শিক্ষা উদ্যোক্তা আবদুল লতিফ খসরু।
শুক্রবার ঐ বেদে পল্লীতে শিক্ষা উপকরণ ও পানিবন্দি শিশুদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেয়া হয় খাতা, কলম আর খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেয়া হয় পুষ্টিকর বিস্কুট। শিক্ষা উপকরণ ও খাদ্য সহায়তা পেয়ে বেদে শিশুরা আনন্দ, উচ্ছাস প্রকাশ করে।
শিক্ষা উদ্যোক্তা আবদুল লতিফ খসরু বলেন, ‘মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে লেখাপড়া করার অধিকার সব শিশুর আছে। কিন্তু নানা কারণে অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। সেজন্য তাদের লেখাপড়ার সুযোগ করে দিতে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের বিত্তবানদের। সেই লক্ষ্যে বেদে পল্লীর শিশুদের শিক্ষা উপকরণ প্রদান ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। আর এভাবে সমাজের সবাই যদি সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াই তাহলে সমাজ হবে আরও সুন্দর, দেশ হবে উন্নত।
বেদে পল্লীর নারীরা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হন খুব সকালে। আর ফিরে আসে সন্ধ্যায়। তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা করেন পুরুষরা।
সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ই.জি.এস শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক তপন চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আবদুল লতিফ খসরুর উদ্যোগের কথা শুনেছি। তার মতো এ ধরনের মহৎ কাজে সমাজের অন্য সব মানুষ এগিয়ে এলে হতদরিদ্র শিশুরা কিছুটা হলেও শিক্ষার আলো দেখতে পাবে বলে আমি মনে করি।’
বেদে পল্লীর সর্দারনী মেহেরুন নেছা (৭০) বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের যখন কেউ খোঁজখবর নেয় তখন ভালো লাগে। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য খসরু ভাইয়ের উদ্যোগে আমরা আনন্দিত।’
বেদে জোৎস্নার (৪০) মেয়ে ইজিএস শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোনিয়া খানম জানান, খাতা, কলম ও খাদ্য সহায়তা পেয়ে সে খুবই খুশি। তার মত এখানকার শিশুরা খাতা, কলম আর খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি। বেদে পল্লীর যে সব শিশুর মধ্যে শিক্ষা উপকরণ ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয় তারা হলো বেদে লিলির ছেলে আকাশ, বেদে পারভীনের দুই মেয়ে লামিয়া ও সুবর্ণা এবং ছেলে পারভেজ, বেদে লিমা বেগমের ছেলে বিপ্লব, বেদে রুমা বেগমের ছেলে রায়হান, বেদে জেসমিনের মেয়ে মিতু, বেদে জেসমিনের মেয়ে মিলি, বেদে লিলি বেগমের মেয়ে বৃষ্টি, বেদে জোৎস্নার ছেলে শহীদ ও মেয়ে সোনিয়া ও তামান্না, বেদে হাজেরার ছেলে সুজন। এ সময় বেদে পল্লীর শিশুদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিবার্তা/বশির/জিয়া