শেরপুর শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা শেখ মমতাজ উদ্দিন (৫৭)। সবজি বিক্রি আর পরিবহন শ্রমিকের কাজ করে সংসার চলে তার। একজন দিনমজুর হওয়া সত্ত্বেও সংসার খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে গরিবদের খাওয়ান তিনি। আর গত ৩০ বছর ধরে এই আয়োজন করে আসছেন মমতাজ।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৫ অগাস্টের দিন সোমবার তার বাড়ির উঠানে চলছে কাঙালি ভোজের আয়োজন। হাড়ি-পাতিল ও লাকড়ির স্তূপ। চলছে মেজবান তৈরির আয়োজন। পাশে চেয়ারে বসে তদারক করছেন মমতাজ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রয়াত বাবার (ফজি শেখ) নির্দেশে জাতির জনকের প্রতি ভালবাসার কারণে গত ৩০ বছর ধরে শোক দিবসে প্রতিবেশী, গরিব ও অসহায় লোকদের জন্য মেজবান করছি।’
তিনি আরও বলেন, এবার আমি এবং আমার ছেলেদের জমানো অর্থে এলাকার প্রায় ৬০০ লোককে খিচুড়ি, জিলাপি ও বিরিয়ানি খাওয়াব। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এ আয়োজন করে যেতে চাই।
শোক দিবস উপলক্ষে খাবারের আয়োজন ছাড়াও মমতাজের বাড়িতে থাকছে কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও বিশেষ দোয়া মাহফিল। এই আয়োজনে এসে অনেকে তাকে দু-একশ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মমতাজ।
তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে মমতাজের সংসার। কখনও সবজি বিক্রি করেন, আবার কখনও পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার তিন ছেলেও বাবার মতো দিনমজুর।
অনেকের সামর্থ্য থাকার পরও কিছুই করে না। কিন্তু দিনমজুর মমতাজ প্রতি বছরই জাতীয় শোক দিবসে মেজবান করে। মমতাজের এমন কাজে এলাকাবাসী হিসেবে গর্বিত বলে মন্তব্য করেন নবীনগরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কামরুল আহসান।
এদিকে বাবুর্চি মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘শেখ মমতাজ গরীব হলেও ৩০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর জন্য মেজবান করে আসছে। আমি ১০/১২ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে রান্নাবান্না করে দিচ্ছি তাকে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও স্বাধীনতা-সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন চক্রান্তকারী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধায় দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচি, যার মধ্যে কাঙালি ভোজ অন্যতম। ইতিহাসের নৃশংসতম ও গভীর মর্মস্পর্শী সেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আজ ৪১তম বার্ষিকী।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি