মানুষের নানারকম নেশা থাকে। কিছু ইতবাচক, কিছু আবার নেতিবাচক। ইতিবাচক উদ্যোগগুলো সমাজ জীবনকে সমৃদ্ধ করে। বর্তমান সমাজ ও জীবন ব্যবস্থায় সামাজিক উদ্যোগমূলক কাজ ঠিক আগের মতো না থাকলেও টিকে রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ প্রত্যন্ত জনপদে থেকেও সমৃদ্ধ সমাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
আব্দুল লতিফ খসরু সেরকমই একজন উদ্যোক্তা। তার নেশা তথ্যচিত্র সংগ্রহ করা। তথ্যচিত্র সাজিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি জনপদ, সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির তথ্য ব্যাংক।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আউয়ালের ছেলে আব্দুল লতিফ খসরু (৬০)। তিনি ২০০৪ সালে কাউখালী উপজেলা শহরের উত্তর বন্দরে নিজ ভবনে একটি তথ্য সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্বপ্ন নতুন প্রজন্ম ও এলাকার মানুষকে অজানা তথ্য জানানো। প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের দর্শনার্থীর ভীড় জমে এ সংগ্রহশালায়।
সংগ্রহশালায় রয়েছে দেশ বিদেশের বিখ্যাত ছবি, রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এ জনপদের শিল্প-সংস্কৃতি ও সংবাদ। তার এ সংগ্রহশালা নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০টি প্রদর্শনী হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ সংগ্রহশালা জেলা ও উপজেলার জনপদের তথ্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে এমন ধারণা থেকেই এ সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন তিনি।
জানা যায়, দীর্ঘ একযুগ ধরে তিনি এ কাজটি করছেন। তার সংগ্রহশালায় রয়েছে এ জনপদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আলোকচিত্র, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ জনপদের সংবাদ ও প্রতিবেদনের কাটিং বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকচিত্র পরিসংখ্যানগত তথ্য ইত্যাদি। জেলা এবং উপজেলার জনপদের কোনো তথ্য কারো প্রয়োজন হলে ছুটে যান আদুল লতিফ খসরুর প্রতিষ্ঠিত সংগ্রহশালায়।
সংগ্রহশালায় রয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিকদের জীবনীর তথ্যচিত্র। এ উপজেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের তথ্যচিত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লেখা চিঠির ফটোকপি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় দলিলের তথ্যচিত্র, রয়েছে রানা প্লাজা, বিডিআর বিদ্রোহসহ নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তথ্যচিত্র, সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ দূর্লভ তথ্যচিত্র, রয়েছে রূপসী বাংলার অনেক চিত্র। সংগ্রহশালায় প্রায় পাঁচ শতাধিক তথ্যচিত্র রয়েছে।
প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে এ সংগ্রহশালায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এটি। দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এলাকার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা মানুষের মিলনক্ষেত্র হিসেবে কাজ করছে এ সংগ্রহশালা। অনেক দর্শনার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দূর্লভ তথ্যচিত্র দেখতে এখানে আসেন। তাই সংগ্রহশালাটি কাউখালীর গর্বের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
কাউখালীর বিশিষ্ট সংস্কৃতিকজন সুব্রত রায় জানান, সত্যিকারের একজন মানুষ হতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়। আর এ জানার ব্যবস্থা করেছেন কাউখালীর আবদুল লতিফ খসরু। তার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক দূর্লভ চিত্র সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। সরকারের তরফ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও উৎসাহিত হবেন বলে জানিয়েছেন এ উদ্যোক্তা।
বিবার্তা/বশির/নিশি