জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। বর্ষা ঋতু শেষ, শরৎ ঋতুরও বেশ কয়েকদিন পার হলো।
ঠাকুরগাঁও এখনও কোন ভারী বর্ষণ হয়নি। বৃষ্টির অভাবে এখানকার কৃষকরা তাদের আমন ফসল বাঁচাতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবে কি না এ চিন্তায় কৃষকরা এখন তারা দিশেহারা।
অনেকের বীজতলায় থাকা চারাগুলি অতিরিক্ত তাপদাহে ঝলসে পুড়ে মরে গেছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অনাবৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কৃষকরা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পানির বিভিন্ন উৎস হতে সেচের মাধ্যমে তাদের কিছু জমিতে উচ্চ ফলনশীল আমন ধান চাষাবাদ করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক এলাকায় পানির তেমন কোন উৎস না থাকায় সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ এলাকা অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে।
কৃষকরা তাদের রোপণের জমির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় সারাক্ষণ চাতক পাখির মতো আকাশ পানে চেয়ে থেকে গোটা বর্ষা মৌসুমসহ শরতের কিছু অংশ পার করছে। মাঝে মধ্যে আকাশ জুড়ে গাঢ় ঘন কালো মেঘের আনাগোনায় ‘এই বুঝি বৃষ্টি এল’ - এরকম ধারণায় কৃষকের মনে একটু আনন্দের দোলা লাগলেও শেষ পর্যন্ত তাদের সে আশা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যুতের অপ্রতুল সরবরাহ ও অন্যান্য পানির উৎসগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকের রোপণ করা চারাগুলিও মরতে বসেছে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে যানা গেছে, বৃষ্টিনির্ভর এ আবাদ কখনও সেচের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। ‘এই এলো বৃষ্টি’- একথা ভেবে তারা রোপণ করা চারাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা জেনেও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে সেচ কার্য চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্ষার ভরা মৌসুমেও আমন ক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির মাঠ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় উঁচু জমির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকরা আষাঢ়ে আমন ধান রোপণ করতে পারেনি অনেকে। যে টুকু জমিতে আমন ধান রোপন করেছে সেগুলো পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে।
আগামী ১/২ সপ্তাহে বৃষ্টিপাত না হলে কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির আশংকা করছেন। প্রচণ্ড রোদে অতীষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষও। খরার কারণে দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন চরম দুভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুপুরে প্রচণ্ড গরমে মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকেরা। হাজার হাজার একর আমন ক্ষেতের মাঠ শুকিয়ে গেছে। আমন ক্ষেতের পাতা শুকিয়ে গাঢ় হলুদ লালবর্ণের হয়েছে। আমন ক্ষেত বাঁচিয়ে রাখতে পানি সেচ উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। এই পরিস্থিতিতে কৃষকেরা এখন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আছে, কখন বৃষ্টি হবে।
বিবার্তা/সাজু/জিয়া