দুলাল হোসেন (৪৫) পেশায় একজন মাংস বিক্রেতা। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার সন্দেহভাজন খুনী ওবায়েদুলকে ধরিয়ে দিয়েছেন নীলফামারীর এই মাংস বিক্রেতা। তার প্রচেষ্টায় বুধবার ডোমার উপজেলার সোনারায় বাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করে।
চার সন্তানের জনক দুলাল হোসেন ডোমার উপজেলার হরিণচড়া গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে। উপজেলার সোনারায় বাজারে প্রতিদিন মাংস বিক্রি করেন তিনি। উপস্থিত বুদ্ধি ও সৎ সাহসের পরিচয় দিয়ে একজন হত্যাকারীকে ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম।
নীলফামারীর সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বিবার্তাকে বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়েদকে সোনারায় বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন মাংস বিক্রেতা দুলাল হোসেন। তৎক্ষনাৎ তিনি পুলিশকে খবর দেন। পরে ডোমার থানা পুলিশ ও র্যা ব-১৩, নীলফামারী সিপিসি-২ সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
দুলাল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, প্রতিদিনের মতো তিনি বুধবার সকালে সোনারায় বাজারে দোকান খুলতে আসেন। ওই সময় বাজারে তেমন লোকজন ছিল না। এমন সময় তিনি পাশের এক দোকানের বারান্দায় উদ্ভ্রান্তের মতো এক যুবককে বসে থাকতে দেখেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভ্যানে করে ওই যুবক নীলফামারীর দিকে রওনা হয়।
তিনি জানান, এতে প্রাথমিক সন্দেহটা আরো দৃঢ় হয়ে ওঠে। তিনি তার মোটরসাইকেল নিয়ে ওই যুবকের পিছু ধাওয়া করেন। এরপর নীলফামারী-ডোমার সড়কের খানাবাড়ী মসজিদের সামনে থেকে তাকে আটক করে নিজের মোটরসাইকেলে তোলেন। তাকে সোনারায় বাজারে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই যুবক নিজেকে ওবায়দুল নামে পরিচয় দিয়ে জানায়, তার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মীরাটাঙ্গী গ্রামে। এতে দুলাল নিশ্চিত হন এই সেই রিশার হত্যাকারী।
দুলাল আরো বলেন, রিশা আমার মেয়ে বা বোনও তো হতে পারত। বিবেকের তাড়না থেকেই ওবায়দুলকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।
এভাবে ওবায়দুলকে আটক করে জেলার নিভৃত পল্লীর এই মাংস বিক্রেতা নিজের বিবেক ও মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন বলে মনে করছেন তার এলাকাবাসী। তবে দেশের ও দেশের বাইরে যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই দুলালের এসব নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও তিনি দোকান খুলে মাংস বিক্রি করেছেন।
বিবার্তা/সুমন/নিশি