প্রায় আশি হাজার জন অধ্যূষিত জেলার কাউখালী উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসা সেবা বলতে যা বুঝায় তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই যে , এটি একটি সরকারি হাসপাতাল।
অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালে এখন রোগী নার্স চিকিৎসক ও কর্মচারী, কেউই আর নিরাপদ নন। নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ আট বছর আগে ২০০৮ সালের জুন মাসে শুরু হলেও নির্মাণের শতকরা ২২ ভাগ সমাপ্ত করে বাকি ৭৮ ভাগ অসমাপ্ত রেখে অজ্ঞাত কারণে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
চিকিৎসা সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় বর্তমানে রোগীদের (মহিলা-পুরুষ) গড় হাজিরা চার থেকে পাঁচজনে এসে দাড়িয়েছে। হাসপাতালটিতে সরকারি মঞ্জুরীকৃত ৯টি পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩জন চিকিৎসক থাকলেও তন্মধ্যে একজন নিয়মিত আসছেন না। ফলে বাকি ৭ থেকে ৮টি পদই শুন্য থেকে যাচ্ছে। হাসপাতালে রোগী না আসায় নার্সরা অফিসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। বিষয়টি নিয়ে জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখসহ সদস্যরা।
কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দীকুর রহমান জানান, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এবং ওই অর্থ বছরেই বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স নূর-ই এন্টারপ্রাইজ’প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫০শয্যায় উন্নীত করণের জন্য নতুন হাসপাতাল ভবনের ভিত্তির পিলার স্থাপনের পর এ যাবত আর কোন কাজ করা হয়নি। তবে ওই প্রকল্পের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পৃথক দুটি আবাসিক ভবনের পিলার ও ছাঁদ ছাড়া তেমন কোন কাজের অগ্রগতি নেই।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল ও সুযোগ-সুবিধার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই এখানে। ডা. ছিদ্দীকুর রহমান আরও জানান, এখানে মেডিসিন, স্ত্রী রোগ (গাইনি), সার্জারি ও এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ এবং মেডিকেল অফিসারের ৯টি পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৩জন। তন্মধ্যে একজন চিকিৎসক নিয়মিত অফিসে আসছেন না, এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনকে পত্র দেয়া হয়েছে। সিনিয়র নার্সের ৯টি পদের সবগুলোতেই নার্স থাকলেও রোগী ভর্তি কম থাকায় তারা অনেকেই হাজিরা দিয়ে বাইরে চলে যাবার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম না থাকায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গর্ভবতী মা হাসপাতালে কার্যকর সেবা না পেয়ে অন্যত্র ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। নবজাতক ডেলিভারি বা সিজারিয়ান অপারেশন করাতে পিরোজপুর অথবা বরিশালে যেতে হয়। এতে গ্রামের দরিদ্র মানুষের চরম ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছরের ১৯ মে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাস্বরূপ তার বাকি প্রকল্পের কাজ বাতিল করা হয়েছে এবং ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুদকে একটি মামলাও রুজু আছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, হাসপাতালসহ প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য আরও ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে গত বছরের ১৪ আগস্ট প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মেসার্স নূর-ই-এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী প্রকল্পের ২২ ভাগ কাজ সমাপ্তির বিপরীতে মোট বরাদ্দ থেকে এ পর্যন্ত এক কোটি ১৩ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে বলে জানালেন ওই প্রকৌশলী।
বিবার্তা/বশির/জিয়া