কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজশাহীর পশুহাটগুলো। ভারতীয় গরুর চেয়ে এবার হাটগুলোতে দেশী গরুর আমদানিই বেশি। দামও বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তে কড়াকড়ি এবং খেয়াঘাট ইজারাদার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে ভারত থেকে গরু-মহিষ আমদানিতে আগ্রহ হারিয়েছেন তারা। ফলে এবার পশুহাটে কমেছে ভারতীয় গরুর আধিক্য।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশু হাট শহরের সিটি হাট। এ হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ভারত থেকে গরু না আসলেও কোরবানির বাজারে এবার সমস্যা হবে না। এ অঞ্চলের খামারিদের কাছে যে পরিমাণ গরু আছে, তাতেই মিটবে চাহিদা। তবে গরুর দাম একটু চড়া।
তিনি জানান, কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় এখন প্রতিদিনই গরু উঠছে হাটে। সকাল থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও ভিড় করছেন হাটে। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই এই হাটে। পাইকারও আসছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। ভারতীয় গরু না আসায় এবার গরুর ভালো দাম পাচ্ছেন বিক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তানোরের মুন্ডুমালা ও চৌবাড়িয়া, পুঠিয়ার বানেশ্বর এবং গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটসহ জেলার সব পশুহাটেই এবার দেশী গরুর আধিক্য। গরুর পাশাপাশি ছাগল ও ভেড়াও উঠছে হাটে। এরই মধ্যে হাটগুলো জমে উঠেছে। তবে মাঝে মাঝে বাগড়া বাধাচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত পশুহাটগুলো।
রবিবার সকালে রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু নিয়ে হাটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা আসছেন, জানতে চাইছেন দাম। দামে-দরে মিলে গেলে কিনছেন। তা না হলে দর কষাকষি করছেন আরেক বিক্রেতার সঙ্গে।
জেলার বাগমারা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়া থেকে গরু কিনতে এসেছেন আবদুল জব্বার। তিনি জানান, প্রতিবছর তারা পাঁচজন মিলে একটি করে গরু কোরবানি করেন। প্রায় তিন মণ ওজনের একটি গরু কিনতে তাদের ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা লাগে। এবার ৫৫ হাজার টাকাতেও হাটে ওই ধরনের গরু পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ এলাকার বাবর মিয়া রাজশাহীর সিটি হাট থেকে গরু কিনে ঢাকার গাবতলী পশুহাটে নিয়ে যান। তার অভিযোগ, গত কয়েক বছর দেশী গরুর এত বেশি দাম ছিল না। গ্রাম থেকে গরু কিনে আনা বেপারিরা এবার হাটে অস্বাভাবিক দাম চাইছেন। ভারত থেকে গরু না আসায় এমনটি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে ক্রেতাদের এমন অভিযোগের পরেও থেমে নেই বেচাকেনা। বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু। ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এদিকে ভিড়ে হাটে যাতে কেউ প্রতারিত না হন, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, হাটজুড়ে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আর বেশ কিছু স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। হাটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা পুরো হাটে সজাগ দৃষ্টি রাখছে।
বিবার্তা/রিমন/নিশি