যশোরে চার দশকে ২১ ইউপি চেয়ারম্যান খুন

যশোরে চার দশকে ২১ ইউপি চেয়ারম্যান খুন
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:৪৬:২৬
যশোরে চার দশকে ২১ ইউপি চেয়ারম্যান খুন
এইচ আর তুহিন, যশোর
প্রিন্ট অ-অ+
যশোর অঞ্চলে বাড়ছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের খুনের তালিকা। একের পর এক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হলেও বিচার হচ্ছে ন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, স্থানীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে একের পর এক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হচ্ছেন। 
 
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে খুলনা বিভাগে শতাধিক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন। এরমধ্যে যশোরেই ২১ জন। সর্বশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম। 
 
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ধারবাহিকভাবে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনির বেপারোয়া হয়ে উঠেছে বলে চেয়ারম্যানদের অভিযোগ। বর্তমানে যারা ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যেও আতংক বিরাজ করছে। অনেকে নিরাপত্তার জন্য শহরের বসবাস করছেন। 
 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ আগস্ট যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। এরপর ৩১ আগস্ট শহরের ষষ্টীতলাপাড়ার একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় লাশ উদ্ধার হয়। এরপর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর বেওয়ারিশ হিসেবে ঘোপ কবরস্থানে দাফন করা হয়। 
 
গত ৩ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। একজন চেয়ারম্যানের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করায় বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যে হতাশা ও আতংক বিরাজ করছে। 
 
এর আগে খুনের শিকার হন যশোর সদরের ইছালি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন। দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তিনি। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে শহর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পথে যশোর-মাগুরা সড়কের পাঁচবাড়িয়ায় (সিনজেনটা ডিপো অফিসের কাছে) এ ঘটনা ঘটে। 
 
এছাড়া সন্ত্রাসীদের শিকার হন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু (৪৭)। দিনদুপুরে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যার পর বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। 
 
যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, পুটখালীর আর এক চেয়ারম্যান নূরুদ্দিন ও বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিমকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। 
 
একইভাবে চৌগাছার পাশাপোল চেয়ারম্যান এনামুল হক টুটুল ও সিংহঝুলির চেয়ারম্যান আশা খুন হন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে। একই ধারাবাহিকতায় ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর চেয়ারম্যান আব্দুর জলিল ও নির্বাসখোলার চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শওকত হোসেনকে হত্যা করা হয়। 
 
শার্শার সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবু, কায়বার চেয়ারম্যান নূর ইসলাম, বাহাদুরপুরের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ও উলাশীর চেয়ারম্যান জিন্নাত উল্লাহকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। 
 
এছাড়াও যশোরের বাঘারপাড়ার রায়পুরের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী, মণিরামপুরের হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল চন্দ্র মন্ডল ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকাশ সাহা ও চালুয়াহাটির চেয়ারম্যান আইউব হোসেন, যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দার ফারুক, বসুন্দিয়ার চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদকে খুন করে চিহ্নিত কিলাররা। চূড়ামনকাটির চেয়ারম্যান কামালের মৃত্যু হয় রহস্যজনক দুর্ঘটনায়। 
 
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সাগর বলেন, আতংক সৃষ্টি করার জন্য জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে জনপ্রতিনিধি খুন করছে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। চেয়ারম্যানদের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সরকারের কাছে আবেদন করছি চেয়ারম্যানদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হোক। 
 
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দিলু পাটোয়ারি বলেন, একজন ইউপি চেয়ারম্যানের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছে। এটা দুঃখজনক ঘটনা। দিনরাত জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকেন তারা। অথচ তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। একের পর এক চেয়ারম্যান খুন হচ্ছে। অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এতে খুনিরা উৎসাহিত হয়। সরকারিভাবে চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
 
জানতে চাইলে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আবুল কাশেম খুন হয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেই অভিযোগ দেয়া হয়নি।
 
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানদের আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যদি কোনো চেয়ারম্যান নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, অভিযোগ দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, কোনো চেয়ারম্যান নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে স্থানীয় থানাকে জানাতে হবে। সব থানায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যানরা চাইলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
 
বিবার্তা/তুহিন/কাফী
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com