যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রায় ২০ হাজার বস্তা ইউরিয়া সার ভিজে দুষিত করছে পরিবেশ। এসব সার ভৈরব নদের তীরে স্তুপ (ড্যাম্পিং) করাসহ গুদামে মজুদ করে রাখা হয়েছিল।
গত ২১ ও ২২ আগস্টের ভারি বর্ষণে এবং ভৈরব নদের উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে এ সব সার ভিজে এক প্রকার গ্যাস বের হতে থাকে। দুষিত এ গ্যাসের প্রভাবে নওয়াপাড়া পৌরসভার পাঁচকবর ও আক্তার ঘাট এলাকায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এছাড়া মরে গেছে বিভিন প্রজাতির প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) চিন, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে এসব ইউরিয়া সার আমদানি করে। যা পরিবহনের জন্য বিসিআইসি ঢাকার সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাস পর্যন্ত এসব সার বার্জ ও কার্গোতে করে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে সরাসরি নওয়াপাড়ায় আসে। এসব সার ভৈরব নদের পাড়ে ১৩টি ঘাটের গুদামে রাখার সময় স্থান সংকুলান না হলে নদী পাড়ের ২০টি স্থানে স্তুপ (ড্যাম্পিং) করে রাখা হয়।
সূত্র আরো জানায়, এসব সার নওয়াপাড়া থেকে ট্রাকে করে যশোর, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, ফরিদপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও ও সান্তাহার এর বাফার গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়।
সর্বশেষ নওয়াপাড়ার মক্কা ঘাট ও আক্তার ঘাটে এক লাখ ৩০ হাজার বস্তা ড্যাম্পিং করা এবং সেকেন্দার গাজীর গুদামে প্রায় ৭০ হাজার বস্তা ইউরিয়া সার মজুদ ছিল। যা সময়মতো পরিবহন করা হয়নি।
এ অবস্থায় গত ২১ ও ২২ আগস্টের ভারি বর্ষণ এবং ভৈরব নদের উপচে পড়া জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে স্তুপ করা সারের মধ্যে। পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায় প্রায় ২০ হাজার বস্তা সার। এরপর পাঁচকবর এলাকায় বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরিয়া সারের বিষাক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ।
ইউরিয়া গলা পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ মারা গেছে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রভাবে দুটি শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরা হলেন, আলাউদ্দিন শেখ, তার স্ত্রী বিথী বেগম, মেয়ে অর্পিতা এবং ছেলে আবিদ, আরিফ ও রাজিব। এরমধ্যে অর্পিতা ও আবিদ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।
অসুস্থ আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ইউরিয়া সারের ঝাঁঝালো গন্ধে গোটা পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখনো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এলাকার অনেকেই কষ্ট পাচ্ছে।
খুলনার খান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন খান বলেন, ভারি বৃষ্টি এবং ভৈরব নদের জোয়ারের পানিতে সারের বড় বড় তিনটি স্তুপ (ড্যাম্প) ভেঙে পড়ে। এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার বস্তা সার সরিয়েছি। ভেজা সারের বস্তার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার হতে পারে বলে তিনি জানান।
সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের প্রতিনিধি মাহাবুব আলম বলেন, বিভিন্ন জেলার বাফার গুদামে নিয়মিত সার পাঠানো হচ্ছে। এরমধ্যে নদের পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে সার ভিজে গেছে।
বিবার্তা/তুহিন/কাফী