পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি, চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ও সয়না রঘুনাথপুর- তিনটি ইউনিয়নের ৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। নির্বাচন চূড়ান্ত না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ।
স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন না হওয়ায় একমাত্র সচিবই হচ্ছেন সর্বময় কর্তা। কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার লোক না থাকায় এককভাবে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রম। ব্যহত হচ্ছে ভিজিএফ, ভিজিডি কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে এলজিএসপির কাজ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সনদ প্রার্থীরা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় এলাকার মানুষ সকল প্রকার নাগরিক সেবা/সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফল ঘোষণা না হলেও চেয়ারম্যানের কক্ষে দিব্যি অফিস করছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার সিকদার। সনদপত্র দেয়া, সালিশ মিমাংসা করাসহ সকল কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। এমন অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী সিদ্দিকুর রহমান।
সিদ্দিকুর রহমানের লিখিত অভিযোগ পেয়ে শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, দেলোয়ার সিকদার চেয়ারম্যানের কক্ষেই অফিস করছেন। রয়েছে অফিসভর্তি লোকজন। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জোর গলায় বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হবে, ততক্ষণ তিনিই চেয়ারম্যান। আর্থিক কাজ বাদে সব কাজ তিনি করতে পারবেন বলে দাবি করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সব আইন কানুন দেখেই কাজ করছি। কোনো কাঁচা কাজ দেলোয়ার সিকদার করে না।
গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভোটারদের মাঝে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে পরিষদে বসছেন দেলোয়ার সিকদার। এখনো ক্ষমতা তার হাতে এটাই ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টায় কাজ করছেন।
এছাড়া চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, অফিসভর্তি লোকজন। সচিব তার চেয়ারে বসে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন। সাংবাদিকদের দেখে কাজ রেখে বিভিন্ন সমস্যার কথা বললেন সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন খান।
তিনি বলেন, একা মানুষ সব দিক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চৌকিদার-দফাদারদের সহযোগিতায় কাজ করছেন বলে জানান।
ভোটে এগিয়ে থাকা চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মাহামুদ হোসেন খোকন বলেন, সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সব ধরনের উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় এলাকা বঞ্চিত হচ্ছে। ভিজিএফ, ভিজিডি বণ্টনেও হচ্ছে মারাত্মক সমস্যা। যেসব ওয়ার্ডে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে তারাও কাজ করতে পারছেন না।
সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এগিয়ে থাকা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মনু বলেন, চূড়ান্ত নির্বাচন না হওয়ায় জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। যেখানে একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির পক্ষে সব কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে একজন সচিবের পক্ষে গোটা ইউনিয়নের মানুষের কাজ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা বলেন, শিয়ালকাঠি ইউনিয়নে-২টি, চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নে- ১টি এবং সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নে-২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ফলে ওইসব ইউনিয়নে পরিষদ না থাকায় কাজের সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য লেখালেখি চলছে যাতে করে দ্রুত পুনঃনির্বাচন হয়। সাবেক চেয়ারম্যান অফিস করতে বা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ করতে পারবে না। শিয়ালকাঠিতে দেলোয়ার সিকদারকে বারণ করা হয়েছে।
বিবার্তা/বশির/নিশি