মৃত্যুর আগে সৈয়দ হকের ইচ্ছা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠের পাশে তাকে কবর দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্থানটি নিচু এবং ধান ক্ষেত হওয়ায় রাতে সেখানে পৌরসভার উদ্যোগে বালু ফেলানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এ দিকে দেশবরেণ্য এ লেখকের মৃত্যুতে তার জন্মস্থান কুড়িগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কুড়িগ্রামবাসী এখন অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয় সৈয়দ শামসুল হক বাদশাকে এক নজর দেখার জন্য।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান নুরুল আমিন জানান, সন্ধ্যার পর পৌর মেয়র আব্দুল জলিলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাটি দিয়ে ৩শতক পরিমাণ ধান ক্ষেত ভরাট করার। এরপর সেখানে কবর প্রস্তুত রাখা হবে।
এছাড়া অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিস্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে সন্ধ্যায় ৭টায় কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবিহা খাতুনসহ অন্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। সেই সাথে ঠিক করা হয়েছে বরেণ্য এই লেখকের শেষ বিদায়ের কর্মপরিকল্পনা।
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের লেখকের শেষ ইচ্ছা পুরণে যেন কোনো ঘাটতি না হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম সফরে এসে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
কবির জন্ম কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায়। তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার পর ঢাকা চলে যান। কুড়িগ্রামে তার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আজিজুল হক পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এ বাড়িতে এখন মানুষের ঢল। সবাই খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
দেশবরেণ্য এ লেখককে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। তারপরই হয়তো জানা যাবে কখন কুড়িগ্রামে আনা হবে। অ্যাডভোকেট আজিজুল হক সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তার প্রিয় বড় ভাইয়ের জন্য। যিনি তার জীবনের অধিকাংশ লেখায় কুড়িগ্রামকে তুলে এনেছেন। কুড়িগ্রামকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। তার ইচ্ছা বাস্তবায়নে কবর কুড়িগ্রামে হবে।
সৈয়দ হক গত ১১মার্চ কলেজের এবং কুড়িগ্রামবাসীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এক পত্রে লেখেন- আমার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এতে আমি আনন্দিত এবং আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার জন্মস্থান আমার শেষ ঘর হবে। এটা যে আমার বহু দিনের ইচ্ছা এবং আমার পরিবার পরিজন সেভাবে প্রস্তুত। তারাও আপনাদের সিদ্ধান্তে আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। আমার স্বশ্রদ্ধ সালাম রইল।
খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুত্যুতে কুড়িগ্রামের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কুড়িগ্রামকে গৌরবাম্বিত করা এই মহাল ব্যক্তিত্বকে হারানোয় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ব্যক্তিত্বরা।
কুড়িগ্রামে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন যিনি, তিনি আমাদের কুড়িগ্রামের সন্তান। তার মৃত্যুতে আমাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক সব্যসাচী এই লেখকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, তিনি ছিলেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠস্বর। তার লেখনীতে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বিষেশভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবার্তা/রোকন/কাফী