‘কোথায় স্বর্গ,কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর, মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর’- অমর কবিতার বিখ্যাত কবি শেখ ফজলল করিমের ৮০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে নিজ বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বিখ্যাত এই কবির স্মৃতিচিহ্ন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। জড়াজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে কবির মাজার ও বাড়ি। বিলুপ্তির পথে তাঁর সাহিত্যকর্ম। কবির রচনাবলী সংগ্রহ করে কবিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ ও তার পরিবার।
১৮৮২ সালের ১ মার্চ লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আধ্যাত্মিক কবি শেখ ফজলল করিম। মাত্র ৫৪ বছরের জীবনে ৫৫টিরও বেশি কবিতা ও উপন্যাসের বই প্রকাশিত হয় তাঁর। সাহিত্যিক জীবনে কাব্যরত্ন, সাহিত্যবিশারদ, নীতিভূষণসহ নানা খেতাবে ভূষিত হন তিনি।
মানবতাবাদী এই লেখকের সব লেখাই আধ্যাত্মিক বলে তাঁকে অনেকে আধ্যাত্মিক কবি বলেও সম্বোধন করতেন। কবির লেখা কবিতা ও গল্প পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই পেলেও সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি তাঁর স্মৃতিচিহ্ন। কবির নামে একটি বিদ্যালয়, একটি পাঠাগার, ও একটি ফলক ছাড়া আর কোনো স্মৃতি নেই নিজ জেলা লালমনিরহাটে।
অরক্ষিত কবির মাজারটিরও জীর্ণশীর্ণ দশা। সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কবির ব্যবহৃত কলম, চেয়ার, খাট, লেপ-তোষক, বালিশ, টুপি, চশমাসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র। কবির স্মৃতি জাগ্রত রাখতে কবির নামে একটি পাঠাগার করা হলেও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে অকার্যকর ও পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কবির নামে পাঠাগারটি অরক্ষিত এবং জড়াজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে। পাঠাগারের সামনে ময়লা-আবর্জনা, অসংখ্য গাছপালা এবং সেখানে কাপড়ের দোকান বসানো।
এ ব্যাপারে কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৪ বছরের নাতি মো. ওয়াহেদুন্নবী বলেন, কবির স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ হতে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে তার কোনটিই বাস্তবায়ন হয় নাই। এ ব্যাপারে সরকারিভাবে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, এবারও জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জানি না প্রতিশ্রুতিগুলো কবে বাস্তবায়ন হবে, আর আমি আদৌ সেগুলো দেখে যেতে পারব কি না।
কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতিচিহ্ন। তাই কবির স্মৃতিচিহ্ন সরকারিভাবে সংরক্ষণ এবং কবিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান কাকিনাসহ গোটা লালমনিরহাট জেলাবাসী।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি ছিলেন শেখ ফজলল করিম। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারিভাবে সংরক্ষণের অভাবে আজ তার স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারের নিকট তার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হবে বলে জানান তিনি।
বিবার্তা/জিন্না/নিশি