বিলুপ্তির পথে সুগন্ধি কালিজিরা ধান

বিলুপ্তির পথে সুগন্ধি কালিজিরা ধান
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:০১:৪০
বিলুপ্তির পথে সুগন্ধি কালিজিরা ধান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
‘হোলাও ধানের (কালিজিরা) চালের ভাত রাইনলে (রান্না করলে) মৌ মৌ গন্ধে চারোমুই (চারিদিক) ভরি যাইত। এই ভাত হুদা হুদা (তরকারি ছাড়া) খাওন যাইত। কালিজিরা ধান চাউলের ভাতের স্বাদের কথা জীবনেও ভুইলতাম ন’- এভাবেই পোলাও (কালিজিরা ধান) নামের ধানের চালের স্বাদ ও সুগন্ধের কথা বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেবপুর গ্রামের কৃষক মনির হোসেন।
 
এক সময় এ উপজেলার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল পোলাও ধান। ৩০ বছরের ব্যবধানে এ ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উফশী ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। শুধু পোলাও ধান নয়, ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মিটাতে সারাদেশ থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব হাজারও জাতের দেশি ধান। মিরসরাইয়ে এটা ‘গুঁয়া ধান’ হিসেবে বেশ পরিচিত। এজাতের ধান সাধারণত কালো বর্ণের হয়। অন্য ধানের চেয়ে এর আকার ছোট।
 
এই সুগন্ধি চিকন চাল দিয়ে তৈরি হয় পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির-পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরো সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার। কিন্তু এসবই এখন কালের স্মৃতি। হাট বাজারে এখন আর এই চাল পাওয়া যায় না। বিলুপ্তির পথে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এ সুগন্ধি ধান।
 
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী বাড়িতে জামাই এলে শ্বশুর বাড়িতে চিকন চালের ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত অথবা গরিব হলেও দিনে এক বেলা অবশ্যই একবার এসব চালের ভাত রান্না হত। এ ধান কাটার সময়কে ঘিরে গ্রামবাংলা মেতে উঠত নবান্নের উৎসবে। সেসব এখন অতীত দিনের স্মৃতি। বীজের অভাব, সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে হারিয়ে গেছে এসব সুগন্ধি ধানের চাষাবাদ। তবে সুখের কথা, বিলুপ্তপ্রায় এই জাতের দু’একটি ধান উপজেলায় ইদানীং বিচ্ছিন্নভাবে চাষ হচ্ছে।
বিলুপ্তির পথে সুগন্ধি কালিজিরা ধান
মিরসরাই কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ জাতের ধান আগে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আবাদ হতো। কিন্তু এসব ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকরা বীজ আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। 
 
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ওই সব জাতের ধান আবাদকারী কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জাতের ধানের ফলন হয় কম। বিঘা প্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয় সেখানে এ জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ আট মণ পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুন পাওয়া যায়। সার, সেচ ও পরিচর্যাও লাগে কম। সে হিসেবে আবাদে লোকসান হয় না বললেও চলে। এখনো গ্রামের গৃহস্ত পরিবারের কাছে এ ধানের কদর যথেষ্ট। এখানে প্রতি কেজি এ জাতের ধানের চাল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে এ চাল সচরাচর সবখানে পাওয়া যায় না।
 
সূত্রে জানা যায়, সরকারের কৃষি বিভাগের মাধ্যেমে এ জাতের ধান আবাদে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা বা প্রদর্শনী প্লট প্রকল্প গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির হাত থেকে তা ফেরানো সম্ভব হবে।
 
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘মিরসরাইতে আগে কালিজিরার ধান উপজেলায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে চাষ তো। উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের ফলন কম হয় বিধায় কৃষকরা এ ধানের চাষ কম করছেন। কৃষকরা নিজ আগ্রহে এ জাতের ধান চাষ করেন। এ ধানটি দেশীয় জাতের ধানের মধ্যে অন্যতম। তবে আমরা আগামিতে দেশীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য এই ধান পুনরায় চাষাবাদ করার উদ্যোগ নেবো।’
 
বিবার্তা/জিয়া
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com