অভিনয় দিয়েই নুসরাত ইমরোজ তিশা দর্শকের মন জয় করেছেন। তবে শুধু দর্শকের নয়, সহকর্মী ও নির্মাতাদেরও মন জয় করে নিয়েছেন তিশা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে তিশা তার নতুন সিনেমা ‘হালদা’র শুভারম্ভ করেছেন। এটি নির্মাণ করছেন তৌকীর আহমেদ। সোমবার থেকে চট্টগ্রামে তিশাকে নিয়ে শুরু করেছেন সিনেমাটির শুটিং। তিশার আরো বিস্তারিত খবর জানাচ্ছেন অভি মঈনুদ্দীন।
গুনী অভিনেতা, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তৌকীর আহমেদ এবারই প্রথম তিশাকে নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মাণ করছেন। নাম ‘হালদা’। এতে তিশার সাথে আরো অভিনয় করবেন জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম। তাই নির্মাতা হিসেবে তৌকীর আহমেদকে এবার হয়তো একটু বেশিই চাপ নিতে হবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি উদ্দিগ্ন নন। কারণ তিশা কিংবা অন্য যারা তার নতুন সিনেমায় কাজ করছেন সবাই তার ঘরের মানুষের মতোই। তাই কাজের চাপ থাকলেও শিল্পীদের নিয়ে তৌকীর আহমেদের তেমন কোনো দুঃশ্চিন্তা নেই। তৌকীর বিশ্বাস করেন সবাই যার যার অবস্থানে থকে ‘হালদা’ নির্মাণে তাকে সহযোগিতা করবেন।’
তিশা বলেন, ‘তৌকীর ভাইয়ার সিনেমার গল্প আমার কাছে খুব ভালোলেগেছে। আমি খুব আশাবাদী সিনেমাটি নিয়ে। সত্যি বলতে কী তৌকীর ভাইয়ের কাজের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস ছিলো এবং আছে। নির্মাতা হিসেবে তিনি সেই বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।’
এদিকে গত ঈদ উল ফিতরে তিশাকে ছোটপর্দায় খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে কোরবানীর ঈদে তিশাকে দেখা যায় তিনটি ঈদ ধারাবাহিকসহ বেশ কয়েকটি খণ্ড নাটকে। তবে গত ঈদে ছোটপর্দায় তিশাকে নিয়ে আলোচনার বিষয় ছিলো প্রায় তিন বছর পর তিশা একসাথে তিনটি ঈদ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন।
তিশা অভিনীত গত ঈদে আলোচিত ঈদ ধারাবাহিক নাটকগুলো হচ্ছে ‘বিউটি বোট’, ‘লজ্জাবতী লায়লা’ এবং ‘মানি ইজ প্রোবলেম’র কাজ।
ধারাবাহিকগুলোতে অভিনয় প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘প্রতি ঈদেই আমাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু গত ঈদে আমার সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। এবারের ঈদে একক নাটক এবং ধারাবাহিক নাটকে কাজ করা নিয়ে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নির্দ্ধিধায় নির্লজ্জভাবে কিছু কাজ করে যান যা সমাজের চোখে অন্যায়, ক্ষতিকর। সেইসব মানুষের ভুলগুলো শুধরিয়ে দেবার চেষ্টা করি আমি। এটি লজ্জাবতী লায়লার মূল বিষয়বস্তু। অন্যদিকে বিউটি বোট -এর গল্পটি দারুণ। পাশাপাশি টাকা থাকলে মানুষের জীবনে কতো সমস্যা হতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে মানি ইজ প্রোবলেম নাটকে। এ নাটকে আমি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকগুলোতে অভিনয় করে বেশ সাড়া পেয়েছি আমি।’
গত ঈদে তিশাকে আরো দেখা যায় সকাল আহমেদ, জাকারিয়া সৌখিন, অনন্য ইমন, তাসলিমা মুক্তা, শাকিল, মুনতাসির বিপন’সহ আরো বেশ কয়েকজন নির্মাতার নাটকে। গত ঈদ উল ফিতরে তার আলোচিত দুটি নাটক ছিলো ‘পবিত্র প্রেম’ ও ‘যাযাবর প্রেম’। দুটিই নির্মাণ করেছেন জাকারিয়া সৌখিন।
এদিকে গেলো ঈদ উল ফিতরে শাকিব খানের সাথে তিশার ‘রানা পাগলা দ্য মেন্টাল’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। সিনেমাটির সাফল্যে আনন্দিত তিশা। এটি নির্মাণ করেছেন শামীম আহমেদ রনি।
মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিশা বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর মিডিয়ার মানুষ অর্থাৎ আমার সহকর্মীরা, আমার সাংবাদিক ভাই বোনেরাসহ সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। তা না হলে হয়তো আজকের তিশা হয়ে উঠা হতো না আমার।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘সত্যি বলতে কী ভবিষ্যৎ পরিতকল্পনা করে আমি কখনো চলি না। বর্তমান নিয়েই ভাবি। ভালোভাবে থাকতে চাই, বাঁচতে চাই, এই তো। দর্শকের কাছে আমি সবসময়ই কৃতজ্ঞ যে তারা আমার কাজ দেখে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।’
তিশার আজকের অবস্থানের পেছনে আছে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর গল্প। আর তার শুরুটা সেই নতুন কুঁড়ি থেকে। অরণ্য আনোয়ারের ‘অতঃপর নূরুল হুদা’ তিশার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
তিশার কথায়, ‘নূরুল হুদা’ অভিনেত্রী হিসেবে আমার টার্নিং পয়েন্ট। আর ‘সিক্সটি নাইন’ আমার বেইজটা স্ট্রং করে দিয়েছে। ‘নূরুল হুদা’ দর্শকদের মেসেজ দিয়েছে যে, তিশা বড় হয়েছে। সে এখন নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে পারে। আর ‘সিক্সটি নাইন’ প্রমাণ করেছে যে, তিশা অভিনয় জানে।’
তিশা মনে করেন, অভিনেত্রী হিসেবে তার এই জনপ্রিয়তার নেপথ্য কারিগরদের মধ্যে অন্যতম হলেন অরণ্য আনোয়ার, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং গোলাম সোহরাব দোদুল।
তিশার ভাষায়, ‘অরণ্য আনোয়ার, গোলাম সোহরাব দোদুল ভাই এবং ফারুকীর কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে, তারা আমাকে বিভিন্ন চরিত্রে কাজের সুযোগ দিয়েছেন। আমাকে নিয়ে তারা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। আমি যখন অভিনয়ে নতুন ছিলাম, তখন তারা আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন বলে আমি বিশেষভাবে তাদের কথা স্মরণ করছি। এছাড়াও আরো অনেক পরিচালক রয়েছেন, যারা আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, নানা চরিত্রের মাধ্যমে।’
শুধু মাহফুজ আহমেদ, মীর সাব্বির, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসানের সাথে নয়, তিশা জুটি হয়ে কাজ করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান ও সালাহউদ্দিন লাভলুর মতো শক্তিমান অভিনেতার সাথে।
সিনিয়রদের সাথে জুটি হয়ে কাজ করা নিয়ে তিশা বলেন, ‘আমি জুটি প্রথায় বিশ্বাসী নই। সবার বিপরীতেই কাজ করে আমি মজা পাই। এটিএম শামসুজ্জামান আঙ্কেল ও সালাহউদ্দিন লাভলু ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করাটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। তাদের বিপরীতে কাজ করে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি’।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ ছবির নায়িকা কোহিনুর ছিলো এমন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন একটি গ্রামের বাসিন্দা। যে আধুনিক জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতেন। নুসরাত ইমরোজ তিশা পর্দায় ও বাস্তব জীবনে কোহিনুর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সাফল্যের ঝুলি পূর্ণ করেছেন অনেকবার। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিশাকে দুই বছরের জন্য সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলো, কিছুদিন আগে তা আবারো বাড়ানো হয়েছে বলে জানালেন তিশা।
তিশা বলেন, ‘আমার জীবনে এতোকিছু হয়ে যাবে তা আমি কখনো আশা করিনি। তবে আমাকে যে সম্মান জানাল, তা শুধু আমার জন্য নয়, দেশের জন্যও। আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হলো, তা আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের মধ্য দিয়ে পালন করছি।’
বিবার্তা/অভি/যুথি