উত্তর বাংলার নিধুয়া পাথারে কল্লোলিত যমুনার তরঙ্গে বাহিত-প্রবাহিত নারী নসিমনের রূপের মাধুরী। ত্যাগের মহিমা, মিলন আনন্দের যুগ-যুগান্তরের হৃদয় স্পর্শ করা ‘নসিমন সুন্দরী’ প্রচালিত লোককাহিনী অবলম্বনে সিরাজগঞ্জের নাট্যদল ‘নাট্যলোক’ সম্প্রতি জাতীয় নাট্যোৎসব ২০১৬’এ মঞ্চস্থ করলো ‘নারী নসিমন’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, সময়ের মেধাবী নাট্যকার শাহ্মান মৈশানের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ।
নাটকে শাশুড়ি-লাঞ্ছিত এক পুত্রবধূ নসিমন। নিয়তিবাদী ইচ্ছার ক্রীড়নক স্বামীর কাপুরুষোচিত দুর্বলতার শিকার সে। সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যায় দন্ডে শুধু শাস্তিপ্রাপ্তই হয়না নসিমন, ক্রুর মানুষের লোভে পুত্রহারাও হয় এই দুঃখিনী নারী।
পুরুষমণা গল্পের সমাপ্তির খাতিরে প্রচলিত কাহিনী হলো পতি ও পুত্রের ইচ্ছাপূরনের দায়ে-এই নসিমন ১২ বছরের নির্বাসন শেষে আবার সংসারে ফেরে। কেননা ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’। কিন্তু, এই পুরুষালী আপ্তবাক্যে রচিত গল্পের পুতুলপ্রতীম নসিমন এই নাট্যগল্পে-না বৈরাগ্য, না সংসার, কোথাও সে আর ফেরে না!
নাটকটি প্রসঙ্গে প্রতিভাবান তরুণ নাট্যকার ও নাট্যশিক্ষক শাহ্মান মৈশান বলেন, নসিমন নাট্যপালায় আমাদের সঞ্জীবিত দেহশালা, আমাদের মন-মননের অর্গলভাঙ্গা কল্পনাকুশলতায় নসিমনের জীবনের গল্পকেই উপজীব্য করেছি একমাত্র শিল্প-আশ্রয় হিসেবে। চিত্তরাজি-কর্পোরেট পুঁজির ক্ষিপ্রতায় ধাবমান এই স্বরচিত সময়ে ভাবুক দর্শকদের জন্য বাংলার সামন্ত সমাজের কঙ্কাল রূপা গল্প ‘নসিমন’।
এ সময়ে এসে, নসিমন আমাদের জীবনে কি তাৎপর্য বহন করতে পারে, তারই এক প্রশ্নবোধক বিরামচিহ্ন-আমাদের জীবন থেকে ফুরিয়ে যায়নি তেমন এক জিজ্ঞাসা নিয়েই ‘নারী নসিমন’ নাট্যপালা।
এদিকে নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ‘নাট্যলোক চায় সবসময় যুগ-উপযোগী ও সমসাময়িক উপস্থাপনার মাধ্যমে অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের চোখে আলোর আভা ফুটিয়ে তুলতে। তারই কাঙ্খিত প্রয়াস নাটক ‘নারী নসিমন’।
উল্লেখ্য, নাটকটির পাডুলিপি উপদেষ্টা হিসেবে অবদান রেখেছিলেন কিংবদন্তী সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
বিবার্তা/অভি/যুথি