চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর, বর্তমান বয়স ৫৮ বছর; তিনি আমার এখানে পিএইচডি করতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। অর্থাৎ তিনি ৫৮ বছর বয়সে পিএইচডি করতে এসেছিলেন।
এই শহরে আসার পর তার অনেক বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় হয়েছে। সেই বাঙালিরা তাকে দেখে কেউ মুচকি হাসে; কেউ আবার তাকে সরাসরি বলেও দিয়েছে, আপনি এই বয়সে বিদেশে পিএইচডি করতে আসছেন কেন? এখন তো আপনার ছেলেমেয়ের পিএইচডি করতে আসার কথা! শুধু এই কথাই নয়; পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটি এই প্রফেসরকে নিয়ে মহা হাসিঠাট্টা শুরু করে দিলো।
আমি জানতামই না যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন প্রফেসর এসেছেন এখানে পিএইচডি করতে। একদিন হঠাৎ দুই বাংলাদেশি একজন আরেকজনকে বলছে, ওই ব্যাটা প্রফেসরের কোনো দরকার আছে এই বুইড়া বয়সে বিদেশে আসার। আরেকজন বলছে, আরে মনে হয় মউজ-মাস্তি করতে আসছে। বুড়া বয়সে ভীমরতি আর কি!
আমি এই দুজনের কথা শুনে জানতে পারলাম তার কথা। তাদের কাছ থেকে ভদ্রলোকের ফোন নম্বর জোগাড় করলাম। আমার খুব তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। তাকে ফোন দিয়ে একদিন তার বাসায় উপস্থিত হলাম। ঘণ্টাখানেক তার সাথে কথা বললাম।
তিনি বললেন, ‘৩০ বছর বয়সে কানাডাতে মাস্টার্স শেষ করে সেখানেই পিএইচডি করার অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময় দেশে পারিবারিক একটা সমস্যা থাকায় মাস্টার্স শেষ করেই দেশে ফিরে যাই। আমার ভালো কোথাও পিএইচডি করার ইচ্ছা সবসময়ই ছিলো। কিন্তু পারিবারিক ঝামেলায় এতদিন সেটা করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এর মাঝে বাবা-মা গত হয়েছেন; ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে; তাই এবার সুযোগ পেয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম- এবার কি যাওয়া যায়? ও রাজি হওয়াতে চলে আসলাম।’
আমি ভদ্রলোকের কথা এত চমৎকারভাবে শুনছিলাম মনে হচ্ছিলো মোহাবিষ্ট হয়ে যাচ্ছি! এত বয়সেও একজন মানুষ আগ্রহ ধরে রেখে ঠিক ঠিক পিএইচডি করতে চলে এসছে দেখে আমার প্রচণ্ড ভালো লাগছিলো। তাছাড়া তিনি কথাও বলছিলেন খুব চমৎকার করে। তার সাথে বিদায় নেয়ার সময় বলে এসেছিলাম- কোনো রকম সাহায্য লাগলে অবশ্যই আমাকে ফোন করে জানাবেন। আমি সবরকম সাহায্য করার চেষ্টা করব।
কিন্তু বাংলাদেশী ছেলেপেলেগুলো এই ভদ্রলোকের জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলল নানান সব অদ্ভুত মন্তব্যে। ভদ্রলোক শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি দেশে ফিরে যাবেন। এসব কথা শোনার চেয়ে দেশে পরিবারের সাথে থাকাই ভালো। আমি অবশ্য অনেক করে বলেছিলাম এদের কথা ধরতে না; কিন্তু তিনি আর থাকতে চাইলেন না। একটা সময় চলেও গেলেন। মাত্র মাসখানেক থেকেই তিনি বিদায় নিলেন।
ইউরোপ-আমেরিকায় থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা একে অপরের দুর্নাম করে বেড়ায়। আমার ধারণা বিদেশে থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই এমন!
আমরা বাংলাদেশীরা মানুষের উপকার করতে না পারি; ক্ষতি করতে বড্ড বেশি ওস্তাদ!
আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে…
বিবার্তা/নিশি