১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। হত্যা করা হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে। পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ করা হয় বাংলা ও বাংলার মানুষকে। প্রায় ২০০ (দুইশত) বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি এবং ১৯৪৭ সালে তাদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ থেকে জন্ম নেয়া পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ভোর আনার প্রত্যাশায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়। আর এই ভিত্তি রচনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে বলেছেন, ‘১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হল, সেখানে স্থির হলো একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে। ....ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বিরাট সাড়া পাওয়া গেল ছাত্রদের মধ্যে। এক মাসের ভেতর আমি প্রায় সকল জেলায় কমিটি করতে সক্ষম হলাম। যদিও নইমউদ্দিন কনভেনর ছিল, কিন্তু সকল কিছুই প্রায় আমাকেই করতে হত। একদল সহকর্মী পেয়েছিলাম, যারা সত্যিকারের নিঃস্বার্থ কর্মী’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৮৮-৮৯)।
পরবর্তীকালে মূলত পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে পরিচালিত ছাত্র আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক গণআন্দোলনে রূপ দিতেই আওয়ামী লীগ গঠন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে’ বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে শেখ মুজিব এর প্রতিবাদ জানান। ফজলুল হক হলের বৈঠকে শেখ মুজিবের প্রস্তাবক্রমে গঠন করা হয় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি আবারও খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর প্রতিবাদে ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলখানায় অনশন করেন। সেই থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগ্রাম।
এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের শরিক দল আওয়ামী লীগ ১৪৩ আসন পায়। গোপালগঞ্জের আসনে প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে হারিয়ে শেখ মুজিব জয়ী হন এবং মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে তিনি কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম,দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। কিন্তু, মন্ত্রিত্বের চেয়ে দলের স্বার্থকে বড় করে দেখে আওয়ামী লীগ। তাই, দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি অনেকবার কারাবরণ করেছেন। অনেক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগই মূলত পূর্ব বাংলার জনগণের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শত বাধা-বিপত্তির মুখেও আওয়ামী লীগ তার গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে মার্শাল ল’ জারি করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। সেই সময় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৬৪ সালের ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’। ইতিহাসে ‘ছয় দফা’ কে বিবেচনা করা হয় ‘বাঙালির ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছয় দফা দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক গণসংযোগ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের শত্রু আখ্যায়িত করে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
শেখ মুজিব কারান্তরীণ হলে ছাত্র সমাজ আওয়ামী লীগের ছয় দফার অনুসরণে ‘এগারো দফা’ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। ছাত্রসমাজের এগারো দফায় মূলত ছয় দফা দাবিরই প্রতিফলন দেখা যায়।
১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে সামরিক সরকার। ছাত্র-জনতার কঠোর আন্দলনের মুখে শেষ পর্যন্ত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ব্যর্থ হয় এবং সামরিক সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়ে শেখ মুজিব তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দেন। ঐতিহাসিক সেই জনসভায় বাংলার ছাত্রসমাজ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
ছয় দফা থেকে জন্ম নেয়া এগারো দফা এবার রূপ নেয় এক দফা আন্দোলনে। স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ধাবিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, ‘একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে...একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনো কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই...জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি-আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী,পৃষ্ঠা ২৯৭)।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১ সালের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বর্তমানে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অলিখিত ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত। ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আসন্ন মুক্তি সংগ্রামের ইঙ্গিত প্রদান করে জনগণকে এর জন্য সর্বোতভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন, ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।..... ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলো।.....রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।.....আমাদের এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা’।
এরপর শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ (নয়) মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এই সংগ্রামে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সমার্থক। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন ব্যক্তি নন। একটি প্রতিষ্ঠান। একটি বিপ্লব। একটি অভ্যুত্থান। জাতি নির্মাণের কারিগর। একটি ইতিহাস, যার ব্যাপ্তি হাজার বছর বিস্তৃত। তাই তো তিনি বাঙালি ‘জাতির পিতা’। তাই তো সমকাল তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’।
বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। তিনিই বাংলাদেশের মানুষকে ভাষার অধিকার আর রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনে দেন। তার আজীবনের সংগ্রাম ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো। তার স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে”। তিনি মনে করতেন যে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমেই দেশ খাদ্যশস্যে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে এবং জমির ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য দেশের কৃষক সমাজকেই সচেষ্ট হতে হবে। এই লক্ষ্যে তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে অনেক কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন জাতি পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তখনই ঘাতকের বুলেট তাকে জনগণের কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নেয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মহলেও বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন একজন আলোচিত এবং উদীয়মান বিশ্বনেতা। সারাবিশ্বের মুক্তিকামী, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এমনকি ঘাতকের বুলেট থেকে রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও। সেই সময় বিদেশে অবস্থান করায় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা কেবল প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আগমন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করেন। মাত্র ৩৪ (চৌত্রিশ) বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। প্রতি মুহুর্তে ঘাতকের বুলেট তাকে তাড়া করে ফিরেছে। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু কন্যা তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। দীর্ঘ ২১ (একুশ) বছর লড়াই সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরে ২১ (একুশ) বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা চুক্তি সম্পাদন করেন। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করেন, মোবাইলের মনোপলি ভেঙে দিয়ে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের দ্বার উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস কাজ শুরু করেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতাসীন হলে আবারও উল্টো পথে দেশ পরিচালিত হয়। স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেয়া হয় রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সরকারি মদদে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ বার হামলা করা হয় তার উপর।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন ‘রূপকল্প ২০২১’ যার মূল উপজীব্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা তার মেধাবী পুত্র, আন্তর্জাতিকমহলে সমাদৃত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়। তারুণ্যের মেধা ও শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর এক অনবদ্য ও প্রেরণাদায়ী কর্মসূচি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঘোষিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে এসেছে। ১ জুলাই ২০১৫ বিশ্বব্যাংকের মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদগণ একে দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাফল্যের অনন্য স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত করছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হত উন্নয়নের টেস্ট কেস হিসেবে, আর আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বগুণে। নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ বাজেট নিয়েও বিশ্ব মিডিয়ায় শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই মূলত আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। রূপকল্প ২০২১ এর অধীনে ঘোষিত সময়ের আগেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যে মশাল বঙ্গবন্ধু জ্বালিয়ে রেখে গিয়েছিলেন ৬৭ বছর আগে, তার সুযোগ্য উত্তরসূরীরা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে তা বহন করে চলেছেন।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু শেখ হাসিনা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ফেসবুক থেকে…
বিবার্তা/প্লাবন