দেশ থেকে প্রতি বছর মোট কতো ছাত্র মালয়েশিয়ায় পড়তে যায় এর কোন হিসাব কি সরকারের কোন সংস্থার কাছে আছে?
এর সঠিক হিসাব আমার জানা নেই। তবে ধারণা করতে পারি প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র মালয়েশিয়ায় পড়তে যায়। এর মাঝে বেশিরভাগ ছাত্ররা ব্যাচেলর লেভেলে পড়তে যায়। অর্থাৎ এদের বয়স ১৭ থেকে ১৯ বছরের মাঝে।
সদ্য টাকা পয়সা হয়েছে এমন বাবা মায়েরা, যারা নিজেদের সন্তানকে দেশে পড়াতে চান না, আবার ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় পড়ানোর মতো অবস্থাও নেই; এরা ছেলেপেলেদের আজকাল মালয়েশিয়ায় পড়তে পাঠান। আমার পরিচত অনেক বড় ভাইয়ের ছেলেরা মালয়েশিয়ায় পড়ছে।
শোলাকিয়ায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়া যে জঙ্গির পরিচয় জানা গেছে; সেই জঙ্গির বাবা জানিয়েছেন এই ছেলে একদিন হঠাৎ এসে বলেছে ‘আমি মালয়েশিয়ায় পড়তে যেতে চাই।’
তার বাবা রাজি হয়নি। কারণ তার আরও দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। তাই তিনি বলেছেন, ‘পড়তে যেতে হলে অস্ট্রেলিয়ায় যাও। সেখনে তোমার ভাইরা আছে।’
কিন্তু এই ছেলে রাজি না হয়ে বাসা থেকে রাগ করে বের হয়ে যায়! এর পর ছয় মাস কেটে গেছে, অথচ বাবা মায়েরা এমনকি পুলিশে পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি। তারা নাকি ধারণা করেছিলো- ছেলে হয়তো রাগ করে মালয়েশিয়া চলে গেছে; রাগ কমলে আবার ফেরত আসবে। গুলশানের ঘটনার পর তাদের সন্দেহ হয়, তাই তখন তারা পুলিশে জিডি করে!
গুলশানের ঘটনায়ও এক জঙ্গি মালয়েশিয়ায় পড়তে গিয়েছিলো। মালয়েশিয়া থেকে যে কিছু একটা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেটা খুব বুঝা যাচ্ছে। এখন আমাদের যেই ছেলেপেলে গুলো মাত্র ১৭-১৯ বছর বয়সে মালয়েশিয়া পড়ার জন্য যাচ্ছে; তারা আসলে সেখানে গিয়ে এক ধরনের স্বাধীনতা পেয়ে যাচ্ছে। কারণ পরিবার তাদের পাশে নেই। এই স্বাধীনতা পেয়ে সন্তানরা কে কি করছে সেটা দেখার কিংবা খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব আসলে বাবা-মা কিংবা পরিবারের সদস্যদের।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সদ্য আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া আমাদের সমাজের বড়লোক বাবা মায়েরা এসব খোঁজ নেয়ার কোন প্রয়োজন মনে করছেন না। একবার চিন্তা করে দেখুন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির যেই ছেলেটার পরিচয় পাওয়া গেলো শোলাকিয়ার ঘটনায়; সে ছয় মাস ধরে নিখোঁজ; অথচ আর তার বাবা মা এই নিয়ে তেমন কোন চিন্তা না করে ভেবেছে- ‘হয়তো রাগ করে মালয়েশিয়া গেছে, রাগ কমলে চলে আসবে!’
এই থেকেই বুঝা যায় এসব পরিবারের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! আমরা ছোট বেলায় বাবা-মায়ের সাথে রাগ করলে এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকতাম কিংবা খুব বেশি রাগ করলে মামা বাড়ি কিংবা দাদা বাড়ি চলে যেতাম এক দিনের জন্য! আর এতেই আমাদের বাবা-মায়েরা অস্থির হয়ে আমাদের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাদের উল্টো অনেক কিছু কিনে দিতেন!
আর আজকালকার ছেলে মেয়েরা রাগ করে মালয়েশিয়ায় চলে যাচ্ছে; ছয় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে; বাবা-মায়েদের এতে কিছুই যায় আসছে না! ছেলে মরে গেলো না, বেঁচে আছে, সেই খোঁজ নেয়ারও দরকার মনে করছে না তারা! পুলিশেও খোঁজ দিচ্ছে না! তারা ভাবছে ছেলের রাগ কমলে চলে আসবে! আমরা আসলে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছি- এ ঘটনা থেকেই খুব সহজে বুঝা যায়!
আমাদের সামাজিক মূল্যবোধে ব্যাপক অবক্ষয় ঘটেছে, বিশেষ করে শহুরে নব্যধনিক শ্রেণীর মাঝে! এই অবক্ষয় মহামারী আকার ধারণ করছে খুব দ্রুতই। একবার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে আর রক্ষে নেই! তাই সময় থাকতে সতর্ক হউন।
আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/জিয়া