রাত ১১.৩০ মিনিট, বাসায় ফিরছিলাম। হাতিরপুল মোড়ে হঠাৎ দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকার একটি ষাটোর্ধ এক রিক্সাওয়ালাকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। মাথায় আর পায়ে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল অসহায় রিক্সাওয়ালা চাচা।
পরের দৃশ্য খুব চেনা! উৎসুক জনতার ভিড়, রক্তে তার শরীর ভেসে যাচ্ছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে, আহারে-উহুরে করছে। নিউমার্কেট থানার একটা টহল পুলিশ দলও ভিড় দেখে থামলো, একটু দেখে নির্বিকার চলে গেলো। এই জোনের ট্রাফিকের টিও সাহেবও এসে কিছুক্ষণ হম্বিতম্বি করে ভিড় সরালো এবং নিজেও কেটে পড়লো। এক ভদ্রলোক শুধু চাচার পকেটে ৫০০ টাকা গুজে দিয়ে চলে গেলো।
অগত্যা একটা ছোট ছেলের সাহায্য নিয়ে আমি চাচাকে দ্রুত পাশের ব্রাইটন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। এত রক্তক্ষরণ দেখে আর ঢাকা মেডিকেল নেয়ার রিক্স নিলাম না।
সেখানেও একই দৃশ্য! চিকিৎসা খরচ কে দেবে সেটা নিয়ে গাইগুই। রিক্সায় লেখা হাজারিবাগের মোতালেব মহাজনকে ফোন দিলাম, ওপাশ থেকে জানালো চাচার বাড়ি বগুড়া, ঢাকায় কেউ নেই। মহাজন বাইরে, আসতে দেরি হবে।
ওখানে নাকি আবার আগে বিল, পরে চিকিৎসা! দায়িত্ব নিয়ে বললাম, সব খরচ আমি দেব। জানালো সিটি স্ক্যান, ড্রেসিং, ভিজিট, ওটি চার্জ, মেডিসিন সব মিলিয়ে ৭/৮ হাজার টাকা লাগবে, ৫ হাজার দিলেই হবে। আমার কাছে তখন ৩ হাজার ছিলো, আর Masud Parvej Lingkon ভাই বিকাশ করে ২ হাজার পাঠালো।
আলহামদুলিল্লাহ্, চাচার চিকিৎসা হয়েছে এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে তিনি এখন একটু ভাল আছেন। বিল মিটিয়ে, সব মেডিসিন কিনে দিয়ে একটা ছেলেকে সাথে দিয়ে সিএনজি করে গ্যারেজে পাঠিয়ে মাত্র বাসায় ফিরলাম।
কাহিনীটুকু লিখতে হলো, কারণ ওই উৎসুক জনতা, নিউমার্কেট থানা পুলিশ, আর ট্রাফিক টিও এর মতো আমিও যদি দায়িত্ব এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতাম, তাহলে ওই অসহায় বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা চাচা হয়তো নাও বাচঁতে পারতো।
প্লিজ, কেউ দায়িত্ব এড়াবেন না। কেউ না কেউ দেখবেই, এমনটা ভেবে পাশ কাটাবেন নাহ। অচেনা কোন জায়গায় আপনিও এমন বিপদে পড়তে পারেন। আজ আপনি কারো সাহায্যে এগিয়ে আসলে, আল্লাহ্ নিশ্চয় আপনার সাহায্যের জন্যও কাউকে ঠিক পাঠিয়ে দেবেন।
মানুষ মানুষের জন্য!
গোলাম রাব্বানির ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী