২৩ জুলাই, ২০১৬। ২০০২ সনের এই তারিখে দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের গেট ভেঙ্গে সাধারণ ছাত্রীদের উপর নজিরবিহীন বর্বরোচিত হামলা চালায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুলিশ।
শামসুন নাহার হল ছাত্রদলের সভানেত্রী লুসিসহ অন্যান্য বহিরাগতদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে হলের সাধারণ ছাত্রীরা। এসব কারনে ফুঁসে ওঠা সাধারণ ছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ ঢুকে সাধারণ ছাত্রীদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায় এবং ১৮ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। হামলাকারী পুলিশ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকার (দক্ষিণ) তখনকার এডিসি আব্দুর রহিম। সে রাতে পুলিশের অশ্লীলতা, নিষ্ঠুরতা ও অবিবেচনার শিকার হয় শত শত শিক্ষার্থী। রুমে বা করিডোরে যাকে যেখানে পেয়েছে নির্বিচারে পিটিয়েছে পুলিশ। অথচ যে মেয়াদোর্ত্তীণ ছাত্রদল নেত্রীদের নিয়ে আন্দোলন, তারা ছিল বহাল তবিয়তে।
পরদিন ২৪ জুলাই কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী ছাত্র ছাত্রীদের বিক্ষোভে কাদুঁনে গ্যাস নিক্ষেপ, রাবার বুলেট চালনা ও লাঠি চার্জ করে পুলিশ। তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী দশ হাজার সাধারন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে 'বহিরাগতদের আন্দোলন', 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৫ জুলাই ধর্মঘট পালিত হয়। ঐদিনও পোষ্টার লাগানোর অপরাধে পুলিশ ৪ জন ছাত্রকে গ্রফতার করে।
২৬ জুলাই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে 'নির্যাতনবিরোধী ছাত্রবৃন্দ' ব্যানারে প্রায় ১০/১২ হাজার ছাত্র ছাত্রীর এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যুত্থানের রূপ নেয় ক্যাম্পাস।
২৭ জুলাই একক ক্ষমতাবলে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে পরদিন সকাল ৮টার মাঝে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় শিক্ষার্থীদের। পুলিশের দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। কিন্তু তবুও শিক্ষার্থীরা তাদের স্বঘোষিত মুক্তাঞ্চল ও শহীদ মিনার এলাকায় তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং আমরণ অনশন শুরু করে।
২৯ জুলাই আবার সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপর চলে পুলিশি হামলা, আহত হয় অর্ধশতাধিক। ফলে পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার উপক্রম হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় উপাচার্যকে।
এরপর থেকে এই দিনটি প্রতিবছর গুরুত্বের সাথে পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। ইতিহাসে এমন কালো দিন যেন আর ফিরে না আসে এই কামনা করি।
মৌমি খন্দকারের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী