আমাদের অফিসে দেখি একটা ফুটফুটে বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির মতো। হলুদ ফ্রক পরা। আমি তাকে ডেকে বলি, আপনার নাম কী?
সে বলে, চর্যা।
আমি বলি, তোমার বাবার নাম কী?
‘মাসুক হেলাল।’
মাসুক হেলাল ভাই আমাদের আর্টিস্ট। খুব সুন্দর ছবি আঁকেন। তাই তো, মেয়েটির মুখে মাসুক ভাইয়ের চেহারার ছাপ আছে।
আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি, বলি, মা, তোমাকে আমি একটা গিফট দিতে চাই, এখুনি, তুমি একটা গিফট চাও, তুমি যা চাইবে, আমি তাই তোমাকে দেব। বলো, কী চাও।
সে বলে, আমাকে একটা বারবি ডল দাও।
আমি বলি, আচ্ছা। ওই যে আংকেলটাকে দেখছ, ওঁকে ডেকে আনো, ওনাকে দিয়ে আনিয়ে নেব।
আমাদের সহকারী আনোয়ার মৃধা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। চর্যাকে আমি দেখিয়ে দিই। চর্যা আনোয়ার মৃধাকে ডেকে আনে।
আমি আনোয়ারের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বলি, চর্যা যা চায়, ওকে এখনি কিনে এনে দাও। মা তুমি যেন কী চেয়েছিলে?
চর্যা বলে, আমার মাকে এনে দাও।
আমি বলি, না, মা, তুমি তো একটু আগে তা চাও নি। একটু আগে কী চেয়েছিলে, সেটা চাও।
চর্যা বলে, না, তুমি বলেছ, আমি যা চাইব, তা দিতে পারবে। এখন কেন অন্য কথা বলছ।
আমি বলি, মাগো, আমার তো সেই ক্ষমতা নাই, আল্লাহ যাকে নিয়ে গেছেন, মানুষ তো মা তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। মা রে এইটা যে আমি পারব না। তুমি অন্য কিছু চাও মা...
আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আনোয়ার মৃধা হু হু করে কাঁদতে থাকে...
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন