১৯৯৩-১৯৯৬, মাত্র চারটি বছর। ২৬ টি- হ্যাঁ, মাত্র ২৬ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এই অল্প সময়েই অধিষ্ঠিত হয়েছেন জনপ্রিয়তা এবং সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে। পরিণত হয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবেচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রে।
তাঁর হিরন্ময় দ্যুতিতে ভাস্বর হয়েছে আমাদের চলচ্চিত্র। এতো অল্প সময়ে মানুষের মনোজগতে এতো দৃঢ় অবস্থান পৃথিবীতে খুব অল্প মানুষই তৈরি করতে পেরেছে।
হ্যাঁ, আমি সালমান শাহ'র কথা বলছি। আমি একজন মহানায়কের কথা বলছি। আমি একজন সুপারস্টারের কথা বলছি, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল চলচ্চিত্র জগতের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশব্যাপী।
আজ ৬ সেপ্টেম্বর। সারা দেশের অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ১৯৯৬ সালের এই দিন সালমান শাহ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বেশ কয়েকজন ভক্ত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। এ থেকেই বোঝা যায় ভক্তদের আবেগের কত উচ্চ শিখরে অসীন ছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অনতিক্রম্য ঔজ্জ্বল্য ছড়ানোর পাশাপাশি তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি নিজেকে এদেশের তরুণদের কাছে ফ্যাশন এবং স্টাইলের আইকন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে, আমরা এখন পর্যন্ত যে ফ্যাশন ফলো করি তার বেশিরভাগই এসেছিল সালমান শাহ'র হাত ধরে, তাও প্রায় দুই দশক আগে।
জিন্স, টি শার্ট, সানগ্লাস, হুডি, জ্যাকেট, কান ফোড়া করা, মাথায় রুমাল বাঁধা, ক্যাপ উলটা করে পড়া, লম্বা চুল রাখাসহ আরও কত যে নিত্য নতুন স্টাইল সালমান জনপ্রিয় করেছেন তা গুনে শেষ করা যাবে না। তাঁর অভিনীত 'নয়ন' নাটকে দেখানো হাত টেবিলে রেখে পাঁচ আংগুলের ফাকে ফাকে ছুড়ি চালানো প্র্যাকটিস করতে গিয়ে কত তরুণের হাত যে রক্তাক্ত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। চলচ্চিত্র জীবনের চারটি বছর হ্যামিলনের বাশিওয়ালার মতোই তিনি তাঁর ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখছিলেন।
বাংলা চলচ্চিত্র আকাশের ধূমকেতুর মত আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। চলেও গিয়েছেন অকালেই। 'ভিনি ভিডি ভিসি' প্রবাদের এত ভালো উদাহরণ সালমান ছাড়া কেউ আর হতে পারে না। যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র থাকবে ততদিনই সালমান বেঁচে থাকবেন অগনিত ভক্তের স্মৃতির পাতায়। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এমন একজন নায়ক আমরা আর কখনো পাব না।
সালমান, তোমার একটি সিনেমার গানের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, আকাশের যে ঠিকানায় তুমি থাক না কেন, সেই ঠিকানায়ই আমরা চিঠি লিখে যাব কারণ আমাদের ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয়জুড়ে...।
আমিনুল হক পলাশের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/কাফী