লাঠি হাতে কোরবানির গরু নিয়ে ফিরছে এক কিশোরী। ফেসবুকের কল্যাণে রবিবার থেকে মুগ্ধ হয়ে ছবিটি দেখছি। কী অসাধারণ! কোন মেয়ে যখন রাস্তায় স্কুটার চালায়, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। মাঝে মধ্যে নিজে থেকে কথা বলে অভিনন্দন জানাই।
কোন নারী পুলিশ যখন মোটরসাইকেল চালায় সেটাও আমাকে মুগ্ধ করে। শুধু শহর নয় সাংবাদিকতার সুবাদে গ্রামে গঞ্জে গিয়ে কোন মেয়েকে সাইকেল চালাতে দেখলেও আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে।
মনে আছে বছর দশেক আগে প্রথমবার যখন নেপালে গিয়েছিলাম আমি দেখলাম শত শত মেয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। দিব্যি ছেলেরা তাদের পেছনে ঘুরছে। নেপালের রাস্তাঘাটে দোকানে মেয়েরা কাজ করছে। আমিল মুগ্ধ হয়ে সেই ছবি দেখেছি। একই ছবি আমি দেখেছি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এমনকি মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও।
বিদেশে যখন এসব ছবি দেখতাম আমার মনে হতো বাংলাদেশে কবে আমি এই চিত্র দেখতে পাবো? সেই ১৯৯১ সাল থেকে গত ২৫ বছর ধরে টানা বাংলাদেশে নারী প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে যেটা ২০১৬ সালে বাস্তব হতে যাচ্ছে আমরা সেটা করেছি ২৫ বছর আগে। কিন্তু সেই বাংলাদেশে নারীরা মোটা দাগে বলতে গেলে নিপীড়িত।
এইদেশে একটা মেয়ে একটু রাত করে হেঁটে বা বাসে বাসায় ফিরবে সেটা অকল্পনীয়। প্রকাশ্যে পথ চলতে যে পরিমাণ হয়রানির শিকার তাদের হতে হয় সেটা কোন সভ্য দেশে হতে পারে, ভাবাই যায় না। তনু কিংবা ইয়াসমিনের মতো মৃত্যু এদেশে নিয়মিত ঘটনা। নারীর নিপীড়ন এদেশের অধিকাংশ পুরুষদের ব্যথিত করে না। বরং সুযোগ পেলে তারাও নিপীড়ক বনে যান।
তবে আশাবাদের কথা হলো এতো এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষায় মেয়েরা আজ অনেক এগিয়ে। আমাদের পুলিশ সেনাবাহিনী বিমানবাহিনী নৌবাহিনী সর্বত্র মেয়েরা কাজ করছে। আমাদের কিশোরী মেয়েদের ফুটবলের সাম্প্রতিক সাফল্য তো ঈর্ষণীয়। এর আগে ক্রিকেটেও সাফল্য দেখিয়েছে আমাদের মেয়েরা। মাবিয়া-সালমা কিংবা কলসুন্দরের মেয়েরা দেখিয়ে দিয়েছে শত প্রতিবন্ধকতা জয় করেও তারা এগুতে পারে।
নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট জয়, সন্তান জন্ম দেয়ার তিন ঘণ্টা পর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হওয়া সুপর্ণা আমাকে খুব আশাবাদী করে। ৭১ এ আমাদের মেয়েদের মিছিল কিংবা অস্ত্র হাতে যুদ্ধের ছবিগুলো আজও আমাকে আপ্লুত করে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের মেয়েরা আমাদের দেশটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এজন্য আমাদের পুরুষদের শুধু মানুষ হতে হবে।
আমি সবসময় আমার সব বান্ধবী ছোট বোন চেনা পরিচিত সব মেয়েকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমরা পুরুষরা যদি মেয়েদের সাহায্য করতে নাও পারি, অন্তত যদি প্রতিবন্ধকতাও না তৈরি করি তবেই আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যাবে। আর ভালোবেসে যদি তাদের পাশে থাকতে পারি ভাই কিংবা বন্ধু হিসেবে তবে আমাদের মেয়েরা বিশ্বজয় করবেই।
আমি সেই সুদিনের অপেক্ষায়।
শরীফুল হাসানের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/জিয়া