অবশেষে বাতিল হচ্ছে ৫৭ ধারা

অবশেষে বাতিল হচ্ছে ৫৭ ধারা
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৮:৫৩:২৫
অবশেষে বাতিল হচ্ছে ৫৭ ধারা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বহুল বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করার কথা ভাবছে সরকার। গণমাধ্যম কর্মীরা বারবার এই আইনের অপ্রয়োগের শিকার হওয়ায় প্রবল বিতর্কের মুখে ধারাটি বাতিলের কথাটি প্রশাসন আমলে নেয় বলে জানা গেছে।
 
সর্বশেষ আইসিটি আইনের শিকার হন সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান। এর আগে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে এই আইনে আটক করা হয়েছিল, মামলাও করা হয়েছিল। আইসিটি আইনের বিতর্কিত ওই ধারাটি ইতোমধ্যে বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ।’ 
 
২০০৬ সালে প্রণীত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে'’ সংশোধন আনা হয় ২০১৩ সালে। সে বছরের ৮ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইনটি সংশোধিত আকারে পাস হওয়ার পরও অব্যাহত ছিল এর সমালোচনা।
 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মিজানুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, ‘বলা যায়, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটি ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। মন্ত্রিসভা এ ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। কাজেই এ নিয়ে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই।’
 
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে এই আইনটির অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন অনেকে। আসক-এর কাছে এরকম ১২ জনের তথ্য রয়েছে, যারা এই আইনের অপব্যহারের শিকার হয়ে কারাগারে আটক আছেন বা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
 
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক। এই ধারাটি সংবাদপত্র ও নাগরিকের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে, যা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধানে। আইনজ্ঞরা বলেন, ‘৫৭ ধারা যদি প্রচলিত থাকে, তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপছন্দের যে কাউকে দমন-পীড়ন চালানো যাবে।’
 
আইসিটি আইনের কিছু ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তখন এক বিবৃতি বলেছিল, ‘মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে শাস্তির পরিমাণ আরও কঠিনতর করা হয়েছে আইনে। এছাড়া সংশোধিত এ আইনে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।’
 
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’-এর খসড়া গত ২২ আগস্ট নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘বর্তমান আইসিটি অ্যাক্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে শাস্তির বিষয়ে অপর্যাপ্ততা থাকায় এই নতুন আইন করতে হয়েছে। এই আইন পাস হলে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা ওই আইন থেকে বাদ পড়বে।’
 
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গত ২২ আগস্ট সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এই আইনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্পষ্ট করা হবে। এ কারণে ৫৭ ধারা নিয়ে যে শঙ্কা তা আর থাকবে না। এই আইনে ডিজিটাল মাধ্যমে করা অপরাধের ধরন বিবেচনা নিয়ে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর রাখা হয়েছে। তবে সর্বনিম্ন শাস্তি নির্ধারণ করা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তা নির্ধারণ হবে।
 
আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইনে সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার চেষ্টা করা হবে।’
 
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় সাতটি বড় ধরনের অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো মিথ্যা ও অশ্লীল, নীতিভ্রষ্টতা, মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি।’
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com