‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শরীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক্।’ লাখ লাখ হাজীর কণ্ঠের এই ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছে মিনা। বিঘোষিত হবে মহান আল্লাহর একত্ব ও মহত্বের কথা।
কাফনের কাপড়ের মতো সাদা দু’টুকরো ইহরামের কাপড় পরে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়বে আল্লাহর বান্দাহগণ। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি হাজীদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করবেন। আল্লাহ তায়ালা এবং বান্দার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অনন্য আবহে বিরাজ করবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্য।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শনিবার পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ হাজি মক্কা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনায় সারারাত অবস্থানের মধ্য দিয়ে তারা পালন করছেন পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।
শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীরা মক্কা নগরী থেকে হেঁটে, বাসে, ট্রেনে করে মিনার উদ্দেশে রওনা হন। মিনায় পৌঁছে হজ পালনকারীরা নফল ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করে সময় কাটান।
রবিবার সূর্যোদয় পর্যন্ত তারা তাঁবুর শহরখ্যাত মিনায় অবস্থানের পর রওয়ানা হবেন পবিত্র আরফাতের ময়দানে সেখানে জোহরের নামাজ ও আসরের নামাজ এক সাথে আদায় করবেন। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে।এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়েই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।
লাখো মানুষের উদ্দেশে প্রদত্ত এই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। আজো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভাষণ দেয়া হয়। ভাষণে গোটা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আর হাজীগণ এক আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার মনমানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে।
তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর জন্য দোয়া করেন। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশা’র নামায এশা'র ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুযদালিফায় ফজরের নামায পড়ে আবার মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন হাজীরা।
পবিত্র আরাফাতে নামিরা মসজিদে জোহর ও আসরের নামাজ এবং খুতবা প্রদানসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মার জন্য দোয়া পরিচালনা করা হবে, পবিত্র আরাফাতে নামিরা মসজিদে নামাজ, খুতবা এবং দোয়া পরিচালনা করবেন গ্র্যান্ড মুফতি ড. সালিহ বিন হুমাইদ। ৬৭ বছর বয়সী এই নতুন গ্র্যান্ড মুফতি দীর্ঘদিন ধরে মসজিদুল হারামের পেশ ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এদিকে পবিত্র মিনায় চতুর দিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে সৌদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিনায় বিভিন্ন দেশের হাজিদের পথের দিক নির্দেশনা কর্মি পাওয়া গেলেও বাংলাদেশী হজ কর্মি পাওয়া যায়নি, বাংলাদেশের হাজিদের দাবি মিনায় হজ কর্মি আরো বাড়ানো দরকার।
বিবার্তা/সাগর/জিয়া