আলাদা রাজ্য হতে চায় জম্মু ও লাদাখ

আলাদা রাজ্য হতে চায় জম্মু ও লাদাখ
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৪০:১১
আলাদা রাজ্য হতে চায় জম্মু ও লাদাখ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
বলা হয়ে থাকে, কাশ্মীর মানেই যে অশান্তি আর অনুন্নয়ন। এবার তাই কাশ্মীরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দাবি করল জম্মু ও লাদাখ। কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের দু’দিনের বৈঠকে লাদাখ ও জম্মুর প্রতিনিধিদের একাংশ ওই দাবি তুলে সরব হন। 
 
তাঁদের বক্তব্য, অশান্ত কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে থাকার জন্যই উন্নয়ন, বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জম্মু ও লাদাখ। এমনিতেই কাশ্মীরের স্বাধীনতা চেয়ে উপত্যকার মানুষের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে সরব। চলতি বিক্ষোভেও ওই দাবি নিয়েই সরব চরমপন্থী হুরিয়ত নেতৃত্ব। তার মধ্যে জম্মু ও লাদাখের এই দাবি নিঃসন্দেহে কেন্দ্রের উদ্বেগ বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
 
রবিবার সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা বৈঠক করলেও তাঁদের কয়েক জন সদস্য চরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ব্যর্থ হন। এর পরে সোমবার সকাল থেকে ফের কাশ্মীরের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা। 
 
সূ্ত্রের খবর, দু’দিনের এই বৈঠকেই জম্মুর এক নির্দল বিধায়ক কাশ্মীরের থেকে আলাদা হওয়ার দাবি তোলেন। একই দাবি ওঠে লাদাখের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও। গত মাসেই প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে লাদাখকে কাশ্মীর থেকে আলাদা করার দাবি জানান লাদাখের বিজেপি সাংসদ থুপস্টান চিওয়াঙ্গ। 
 
সোমবারও লাদাখের প্রতিনিধিরা ওই দাবি তোলেন। তাঁদের সমর্থন করেন লাদাখের প্রতিনিধিরা। জম্মুর উধমপুরের বিধায়ক পবন গুপ্ত সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন, কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে থাকাই হল জম্মুর উন্নতির পথে প্রধান বাধা। কাশ্মীর তার অশান্তি, সন্ত্রাসবাদী সমস্যার জন্য গোটা বিশ্বে পরিচিত। তার ফলে শান্তিপ্রিয় জম্মু ও লাদাখের মানুষ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
 
কাশ্মীর বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। বিজেপিও ছোট রাজ্যের পক্ষেই সওয়াল করে এসেছে। নিরাপত্তার প্রশ্নেও লাদাখের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু জম্মুর মধ্যে থাকা ডোডা, কিস্তওয়ার, পুঞ্চ, রামবানের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলি বরাবর কাশ্মীরের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ যাত্রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই লাদাখের কপালে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা থাকলেও জম্মুর তা নেই বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
 
সপ্তাহের শুরুর দিনটিতে হুরিয়তের বন্ধ ও প্রশাসনের কার্ফু সত্ত্বেও শ্রীনগর আজ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। রাস্তায় লোক বেরিয়েছে, নেমেছে গাড়ি। খুলেছে দোকান। তবে স্কুল-কলেজ আজও বন্ধ ছিল। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফরের পরেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক না হওয়ার জন্য কৌশলগত ভাবেই হুরিয়তপন্থীদের দায়ী করে সরব হয়েছে শাসক পিডিপি ও কেন্দ্র। 
 
সোমবার হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির বাড়ির দরজা থেকে ফিরে আসতে হয় প্রতিনিধি দলের সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি, শরদ যাদবদের। এ নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও আজ এটাই অস্ত্র হয়ে উঠেছে পিডিপি ও প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কাছে। অতিথিবৎসল হিসেবে পরিচিত কোনও কাশ্মীরির দরজা থেকে ফিরে আসা নিয়ে গিলানির ‘কাশ্মীরিয়ত’কে খোঁচা দিয়েছেন পিডিপি নেতা তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হাসিব দাবু। তাঁর কথায়, ‘আমি ৩৭০ ধারার জন্য কাশ্মীরি নই। আমি আমার মূল্যবোধের জন্য কাশ্মীরি। এটাই আমাদের পরিচয়। কিন্তু অতিথিদের দরজা না খুলে সেই কাশ্মীরিয়ত-কে কলঙ্কিত করেছেন গিলানি।’
 
আজ মঙ্গলবার সকালে শ্রীনগরে সাংবাদিক বৈঠকেও অতিথিপরায়ণতা নিয়ে হুরিয়ত নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পিডিপির ধাঁচে কেন্দ্রও এখন চাইছে হুরিয়ত নেতাদের আম-কাশ্মীরিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে। দু’পক্ষই মনে করছে, একমাত্র তাতেই উপত্যকায় শান্তি ফেরা সম্ভব। সেই কারণে কাশ্মীরি ভাবাবেগকে হাতিয়ার করেই গিলানিদের খোঁচা দিয়ে রাজনাথ আজ বলেন, ‘গত কাল প্রতিনিধি দলের কিছু সদস্য হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু যে ভাবে তাঁদের দরজা থেকে ফিরে আসতে হয়, তা কোনও ভাবেই মনুষ্যত্ব হতে পারে না। ওই বিচ্ছিন্নবাদীরা গণতন্ত্রে তো বিশ্বাস করেনই না, এমনকী কাশ্মীরিয়তেও বিশ্বাস করেন না। যাঁরা শান্তির পক্ষে, কেন্দ্র এখনও তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।’ এ দিন সকালে কাশ্মীরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে জম্মু উড়ে যায় সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলটি।
 
আজ মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রকে আশ্বাস দিয়েছেন, উপত্যকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। রাজ্য সরকারের আশা, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। দেরিতে হলেও গত ক’দিন ধরে মৃত ও আহতদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে শুরু করেছেন মেহবুবা। এতে কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের।সূত্র: আনন্দবাজার।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com