সপ্তাহখানেক হলো একশোয় পা দিয়েছেন ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির বাসিন্দা অরুণা মুখার্জি। বয়স বাড়লেও কমেনি মনের জোর। এই বয়সেও অন্য একাকী বৃদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে গড়তে চলেছেন একটি বৃদ্ধাশ্রম। প্রথমে দশজনকে নিয়ে নিজের বাড়িতেই চালু করতে চলেছেন বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমের নাম দিয়েছেন ‘আনন্দধারা আপনগেহ’।
অরুণা মুখার্জি বলেন, ‘যেসব মায়েদের সন্তানেরা বাইরে থাকে, তাদের দুঃখ, বেদনা আমি নিজে অনুভব করতে পারি। সেজন্য তাদের একসঙ্গে থাকার একটা জায়গা তৈরি করতে চাইছি। কয়েকজন বয়স্কদের সঙ্গে আমার বাকি দিনগুলোও আরো ভালো কাটবে।’
তার নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনিরাও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকেন। বৃদ্ধাশ্রম না হলে যে অরুণা মুখার্জিকে একা থাকতে হয়, তা নয়। গান শেখান, ছোট বাচ্চাদের পড়ান, বাগান করেন।
এই বয়সেও এত কাজ করার শক্তি পান কোথা থেকে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এত মানুষের ভালবাসা আর শ্রদ্ধা পাই, সেখান থেকেই এনার্জি আসে আমার।’
ঢাকায় জন্ম নেয়া অরুণা মুখার্জি প্রায় ৮০ বছর আগে বিয়ে করে গুয়াহাটিতে চলে যান। তার স্বামী ছিলেন গুয়াহাটির বিখ্যাত কটন কলেজের রসায়নের অধ্যাপক যদুলাল মুখার্জি।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় হাজার হাজার উদ্বাস্তু যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসাম যান, সেসব ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে কিছু রান্না করা খাবার তুলে দিয়েছিলেন অরুণা মুখার্জি। জানতে পেরে তার স্বামী তাকে বকাবকি করেন। এরপর থেকে বাড়ির খাবারে নিজের ভাগটুকু তুলে দিতে শুরু করেন উদ্বাস্তুদের জন্য। আর নিজে খেতেন শুধু চা আর বিস্কুট। সেই অভ্যেস আজও রয়ে গেছে তার।
তিনি বলেন, ‘আমি সারাদিনে দুই কাপ চা আর বিস্কুট খাই। মাঝে মাঝে মুড়ি খাই। ভালোই তো আছি। আসলে আমি মনেই করি না যে মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে। আমার ছেলে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছি বলে। সবাই তো পরীক্ষা করে দেখেছে আমি একদম সুস্থ আছি।’ সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/নিশি