কাশ্মিরে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে অবস্থিত ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে দেশটি। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে কড়া পাল্টা জবাব দেয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে।
নয়া দিল্লিতে ভারতের লেফটেনেন্ট রণবির সিং বলেন, রবিবারের হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জাইশ-ই-মোহাম্মদের ছাপ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত নমুনাগুলোতে ইঙ্গিত মিলেছে, হামলাকারীরা বিদেশী এবং তাদের অস্ত্রসজ্জায় পাকিস্তানের চিহ্ন রয়েছে।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের লোকরা উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে বারামুলা জেলার শ্রীনগর-মুজাফফরাবাদ জাতীয় সড়কের পাশে উরির সেনার ১২ নম্বর ব্রিগেডে সদর দফতরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়। অন্যদিকে জওয়ানদের গুলিতে নিহতে হয়েছে চার জঙ্গি।
এই ঘটনায় পরমানবিক শক্তিসম্পন্ন প্রতিবেশী দুটি শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরো উসকে দিয়েছে; তৈরি হয়েছে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সামরিকায়িত এই সীমানাজুড়ে অনেক জায়গায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনারা খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।
ঘটনাটিকে ‘কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি জাতিকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যারা এই ভয়াবহ হামলায় জড়িত তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে।’
এছাড়া এ ঘটনার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং সেভাবেই তাকে চিহ্নিত করে একঘরে করে রাখতে হবে।
তবে ভারতের এ দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেন, ‘হামলার ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের তাৎক্ষণিক অভিযোগ তুলেছে। আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি।’
এদিকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির এক বৈঠকে আজ সোমবার ‘হট পারস্যুট’র প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, ‘হট প্যারাস্যুট’ নীতি হলো- পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে, প্রয়োজনে সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিতে প্রত্যাঘাত করা। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবাণী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘হট পারস্যুট’ নীতি নিতে চেয়েছিলেন। যদিও পরে তা আর কার্যকর হয়নি।
বিবার্তা/নিশি