মুহূর্তেই বদলে গেল মোদির ঠিকানা!

মুহূর্তেই বদলে গেল মোদির ঠিকানা!
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৪:৩০:২০
মুহূর্তেই বদলে গেল মোদির ঠিকানা!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যে সড়কে অবস্থিত, তার নাম পাল্টে যাওয়ায় নরেন্দ্র মোদির ঠিকানাও বদলে গেছে। আর তা হয়েছে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।
 
দিনভর দফতরে বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ যখন নিজের বাসভবনে ফিরলেন, ততক্ষণে তার ঠিকানা বদল হয়ে গেছে। রেসকোর্স রোডের নাম হয়ে গেছে লোক কল্যাণ মার্গ।
 
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর থেকে সাত নম্বর রেস কোর্ড রোডে থাকতে শুরু করেন রাজীব গান্ধী। তারপর বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের আমলে সিদ্ধান্ত হয়, এখানেই পরের সব প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। দিল্লিতে রেসকোর্সের ঠিক উল্টো দিকে এই রোডটি তখন থেকেই জনসাধারণের নাগালের বাইরে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কড়া নিরাপত্তা।
 
কিন্তু এই রাস্তার নাম বদলানোর জন্য কয়েক দিন ধরেই সক্রিয় ছিলেন বিজেপির নয়াদিল্লি কেন্দ্রের সাংসদ মীনাক্ষী লেখি। ‘রেসকোর্স’ শব্দটি ভারতীয় ‘সংস্কৃতি’র সঙ্গে খাপ খায় না – এই অভিযোগ তুলে তিনি রাস্তাটির নাম ‘একাত্ম মার্গ’ রাখার প্রস্তাব দেন। সংঘ পরিবারের তাত্ত্বিক নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে তার প্রচারিত মানবতাবাদ, যাকে ‘একাত্ম মানব’ বলা হয়, তাকে স্মরণ করতেই এই সুপারিশ করেন মীনাক্ষী। তার যুক্তি ছিল, এর ফলে দীনদয়ালের আদর্শ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
 
রেসকোর্স রোডটি নয়াদিল্লি পুরনিগমের আওতায়। তাই নাম পাল্টাতে গেলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেখানেই। আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের নেতৃত্বে নয়াদিল্লি পুরনিগমের বৈঠকে স্থির হয়, ‘একাত্ম মার্গ’ নয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের রাস্তার নাম হবে ‘লোক কল্যাণ মার্গ’। কেন্দ্রের সঙ্গে নিরন্তর বিবাদ থাকলেও খোদ মীনাক্ষী লেখিকে পাশে রেখেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এই ঘোষণা করেন। আর রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে নাম বদলের জন্য কেজরিওয়ালের তারিফ করেন লেখিও।
 
পরশু থেকে কেরলের কোজিকোড়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হচ্ছে। তিন দিনের বৈঠক শেষ হচ্ছে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন ২৫ সেপ্টেম্বরে। সে দিনই প্রধানমন্ত্রী মোদি এক বছর ধরে দীনদয়ালের নামাঙ্কিত ‘অন্ত্যোদয়’ প্রকল্পকে বিরাট ভাবে রূপায়ণ করার ডাক দেবেন। যার মূল লক্ষ্য হবে সাধারণ মানুষের সেবা। ক’দিন আগে মোদির জন্মদিনকেও ‘সেবা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছে। সেই হিসেবে একান্ত মার্গের বদলে ‘লোক কল্যাণ মার্গ’ নামটি নিয়ে আপত্তি তোলেনি বিজেপি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বরং এই নাম বদলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
 
কিন্তু আম আদমি পার্টি সহজে বিজেপির প্রস্তাব মেনে নেয়নি। লেখির প্রস্তাব আরএসএস ঘেঁষা দেখে কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘আমার কাছেও এই রাস্তার নাম গুরু গোবিন্দ সিংহ মার্গ করার প্রস্তাব ছিল।’’ আপের এক বিধায়ক ওই রাস্তার নাম আরএসএস ঘনিষ্ঠ কারও নামে না করে ৬৫ সালের যুদ্ধের এক সৈনিকের নামে করার দাবি তোলেন। কেজরীবালের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত ‘লোক কল্যাণ মার্গ’-নামেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সিলমোহর পড়ে।
 
তবে নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে এর যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্কও ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগে দিল্লির ঔরঙ্গজেব রোডের নাম বদলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের  নামে করা হয়েছে। তার নেপথ্যেও ছিলেন দিল্লিতে বিজেপির আর এক সাংসদ মহেশ গিরি। গুড়গাঁও-এর নাম গুরুগ্রাম করার বিতর্কের রেশও এখনও থামেনি। যে আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতর, সেই রাস্তাকে মহারানা প্রতাপের নামে করার দাবি এখনও রয়েছে। ফলে নাম বদল করে ইতিহাস মুছে দেয়া কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে আবার। এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কটাক্ষ, নাম বদলের হিড়িক দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে বাকি সব কিছু ঠিক চলছে! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
 
বিবার্তা/ইডি/ইফতি
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com