সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হজরত মোহাম্মদ (স.) ’কে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
জানা যায়, তারেক বিশ্বাস নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি থানায় পৃথকভাবে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কয়েক দিন আগে এই সামাজিক আন্দোলনকর্মীকে তার নদীয়া জেলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে কলকাতার হাওড়া শহর পুলিশ। তবে ঘটনাটি সামনে আসে বুধবার রাতে।
হাওড়া পুলিশ কমিশনার ডি পি সিং বলেন, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তারেক বিশ্বাসকে। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, ধর্মকে অপমান করাসহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারা ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে।
শিবপুর এলাকার কিছু লোক তারেকের নামে থানায় গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগপত্র দায়ের করেছিলেন। একইসময় কলকাতার একটি থানায় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানাতেও তার নামে অভিযোগ দায়ের হয়।
অন্যতম অভিযোগকারী সানাউল্লা খান অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি। তিনি বলেন, ‘তারেক আমার পূর্ব পরিচিত এবং ফেসবুক ফ্রেন্ড। তার পোস্টটা দেখেই আমি ফোন করে তার কাছে জানতে চাই যে নবী (স.)’র নামে এই কটুক্তি কেন করল? তিনি একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, তাঁকে নিয়ে এরকম বিকৃত রুচির পোস্ট করার জন্য কোথায় তথ্য বা দলিল পেয়েছে সেটা জানতে চাই। আর সেটা না দিতে পারলে যেন পোস্টটা ডিলিট করে। আমি এটাও সেদিনই বলেছিলাম তথ্য-দলিল না দিতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
সানাউল্লা খান বলেন, ‘ওই কথার জবাব না দিয়েই একটি অসমর্থিত দলিল ও পোস্ট করে। তখন আমি একঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম পোস্টটা সরিয়ে দিতে। তারপরেই থানায় অভিযোগ জানাই। আমার ধর্মকে কেউ যদি আঘাত করে বা আমি যদি কারো ধর্মে আঘাত করি, সংবিধানই আমাকে অধিকার দিয়েছে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার। আমি সেটাই করেছি।’
গ্রেফতারির খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযোগকারী সানাউল্লা খানের সমর্থনে যেমন অনেকে এগিয়ে এসে মন্তব্য করছেন, তেমনই তারেক বিশ্বাসের স্বপক্ষেও দাঁড়িয়েছেন বহু মানুষ।
তারেক বিশ্বাসের মুক্তি চাই বলে একটি ফেসবুক পাতা খোলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশান অব ডেমোক্রেটিক রাইটস বা এপিডিআর বৃহস্পতিবার তারেকের মুক্তির দাবিতে পুলিশের কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছে। আইনি সহায়তারও ব্যবস্থা করছে তারা।
এ ঘটনাকে সরাসরি বাক স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে সংগঠনটির হাওড়া জেলা সম্পাদক বাসুদেব মুখার্জি বলেন, ‘নাস্তিক হিসেবে তো আমার একটি মত থাকতেই পারে। সেটা আমি প্রকাশও করতে পারি। তার মানে তো এই নয় যে আমি সহিংসতায় প্ররোচনা দিচ্ছি বা সেরকম কিছু করছি। একজন সেটা লিখল বলে পুলিশ অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন যুক্তিবাদী যদি ধর্মের অন্য একটি ব্যাখ্যা দেয়, তাহলে সেটা কেন সহ্য করবেন না কেউ? যুক্তিবাদীরা ধর্মের অন্য ব্যাখ্যা দিলেই হিন্দু হোক বা মুসলমান মৌলবাদীরা সেটাকে ধর্মের ওপর আঘাত বলে প্রচার করছে। কিন্তু এটাতো ধর্মের ওপর আঘাত নয়।’
বিবার্তা/নিশি