উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার পরই ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করার উদ্যেগ নিয়েছে নয়া দিল্লি। গত রবিবার ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জওয়ানের নিহত হওয়ার পর ভারতজুড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বদলা নেয়ার দাবি উঠেছিল।
যদিও যুদ্ধের বদলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সরকারের শীর্ষস্তরের মন্ত্রীরা কূটনৈতিকভাবেই পাকিস্তানকে একঘরে করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাই এবার গুলির বদলা পানি দিয়ে নিতে চাইছে ভারত। অর্থাৎ পাকিস্তানের ওপর আরো চাপ বাড়াতে সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি বাতিল করতে পারে ভারত।
সাউথ ব্লক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রসঙ্ঘে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর এবিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তারা। আর তা হলে পুরো পাকিস্তান পানি না পেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে পারে। পানি বন্ধ হয়ে গেলে মরুভূমি হয়ে যেতে পারে পাকিস্তানের একাংশ।
প্রসঙ্গত ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের সঙ্গে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মধ্যে সিন্ধু পানিবন্টন চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পাঞ্জাবের তিন নদী রাভী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি পায় ভারত।
অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীরের তিন নদী অর্থাৎ সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের পানি পায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রায় ৮০.৫ শতাংশ পানি যায় এই নদীগুলোতে থেকে। চুক্তি অনুযায়ী অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে পাকিস্তানকে পানি দেয়া হচ্ছে।
এইসব নদীর পানি থেকেই পাকিস্তানে একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে। ফলে এই চুক্তি বাতিল হলে বড় সমস্যায় পড়তে পারে তারা। খাবার পানির যেমন সমস্যা হবে, তেমনি প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎ, শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রেও। চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি দেয়া বন্ধ করে দিলে মার খাবে পাকিস্তানের অর্থনীতি।
অন্যদিকে ভারত এই নদীগুলো থেকে মাত্র ১৯.৫ শতাংশ পানি পায়। এরজন্য প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি রুপির ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতকে। যে পরিমাণ পানি পাকিস্তানকে ছাড়া হচেছ তাতে জম্মু-কাশ্মীরে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।
এরপরও আন্তর্জাতিক মহলে কম পানি দেয়া হচ্ছে বলে ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার পাকিস্তান। নদীর পানি নিয়ে পাকিস্তান মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কার-ই-তৈবার প্রধান হাফিজ সৈয়দও ভারতকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
চলতি বছরের জুন মাসে শিয়ালকোটে এক জনসভা থেকে হাফিজ সৈয়দ হুমকি দিয়ে বলেন, কাশ্মীরের সঙ্গে নদীগুলোকেও ভারত থেকে মুক্ত করে আনার জন্য জিহাদি আন্দোলন শুরু করবেন।
১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পরও দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হলেও ভারত এই চুক্তি থেকে সরে আসেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে পাকিস্তান। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় ২০০৪ সালে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না মানলে পাকিস্তানের ওপর আর আস্থা, বিশ্বাস রাখা যাবে না।
সেক্ষেত্রে ভারত যদি সিন্ধু চুক্তি বাতিল করে, তবে গোলা-বারুদ ছাড়াই নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে পাকিস্তান।
সেই কারণেই পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে সিন্ধু চুক্তি বাতিলের দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদী চুক্তি অনুযায়ী কোনো এক পক্ষ এভাবে চুক্তি ভাঙতে পারে কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, আমি নিশ্চিত যে, সিন্ধু চুত্তির বাস্তবায়ন নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মতপার্থ্যক্যের বিষয়টি আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু এই ইস্যুটি দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে। সাধারণত যে কোনো চুক্তি টেকাতে দুই পক্ষের পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এটা একতরফা হতে পারে না।
তবে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে ভারত যে এবার ভাতে মারার পরিকল্পনা নিয়েছে সেটার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বিকাশ স্বরূপের বক্তব্যে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সে সম্পর্কে আমি প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।
বিবার্তা/ডিডি/কাফী