কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলার জেরে পাকিস্তানকে আরো চাপে ফেলতে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইসলামাবাদের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সার্ক বৈঠক বয়কট নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদত দিয়ে ও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে একটি দেশ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার ফলে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন সফল করা সম্ভব নয়।’
সার্ক বয়কটের এই সিদ্ধান্তে আরো তিনটি দেশকে পাশে পেয়েছে ভারত - আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভুটান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আরো কয়েকটি দেশ ইসলামাবাদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার ব্যাপারে তাদের অনিচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছে বলেই আমাদের ধারণা।’
ভারত তাদের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই সার্কের চেয়ার-দেশ নেপালকে জানিয়ে দিয়েছে। (২০১৪ সালে শেষ বার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল নেপালে। তাই তারাই এখন সার্কের চেয়ার-দেশ) সার্কের সনদ অনুযায়ী কোনো একটি সদস্য দেশ যোগ না দিলেই শীর্ষ সম্মেলন বাতিল হয়ে যাবে।
ভারতের বক্তব্য, তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা, যোগাযোগ এবং পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধ। কিন্তু একইসঙ্গে তারা এটাও বিশ্বাস করে, একমাত্র সন্ত্রাসমুক্ত পরিস্থিতিতেই এই বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সন্ত্রাস নিয়ে সার্কভুক্ত একাধিক দেশ এক হওয়ায় এবং সার্ক সম্মেলন বাতিলের যাবতীয় দায় ইসলামাবাদের উপর চাপিয়ে দেয়ায় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরো চাপে পড়বে বলেই ধারণা ভারতের।
তবে মঙ্গলবার পাকিস্তান পাল্টা বক্তব্য দিয়ে ভারতকেই দোষারোপ করেছে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের টুইট থেকে আমরা সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জেনেছি।’
এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ভারতের অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের অভিযোগ, ‘গোটা বিশ্ব জানে যে ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং তাতে অর্থ জোগাচ্ছে।’
সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত পাক-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়নে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। উরির ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোদি। পানি বা বাণিজ্য নিয়েও ইসলামাবাদের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লি।
মঙ্গলবারই সিন্ধু চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে মোদি বলেন, ‘রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না।’ সিন্ধু নদী কমিশনের বৈঠকও ইতোমধ্যে বাতিল করেছে ভারত।
সেইসঙ্গে পাকিস্তানকে দেয়া বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা এমএফএন) মর্যাদা কেড়ে নেয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে দিল্লির দরবারে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন মোদি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এমএফএন’র মর্যাদা দেয় ভারত। এই মর্যাদা অনুযায়ী বাণিজ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো রকম বৈষম্য করে না ভারত।
বিবার্তা/নিশি