সউদি পরিবারে বৈবাহিক সমস্যার অর্ধেকই উদ্ভুত হয় বউ-শ্বাশুড়ির বিরোধ থেকে। এছাড়া তিন শতাংশ তালাকের কারণও শাশুড়ি।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে স্থানীয় মিডিয়া এ খবর দেয়। সমীক্ষার উদাহরণ টেনে কিং আবদুলআজিজ ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক খলউদ নাসর বলেন, ৪০% শাশুড়ি তাদের ছেলের বউদের ঈর্ষা করেন।
সমীক্ষায় বলা হয়, ছেলের বৌ আনার প্রথম পাঁচ বছরে এই হিংসা চরমে ওঠে। এ সময় একজন মা ভাবতে থাকেন, ছেলের সুন্দরী ও তরুণী বৌ ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে, যাকে তিনি জীবনভর কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন।
নাসর বলেন, এই ঈর্ষার মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে। নতুন সংসারের প্রতি ছেলের অধিক মনোযোগ এবং মায়ের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাওয়া মায়ের মনে ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, মা চান আনুগত্য আর স্ত্রীর দাবি, মনোযোগ ও ভালবাসা। প্রয়োজন হলো এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয়। আর শাশুড়িকে বশে রাখতে হলে চাই দক্ষতা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রবল ক্ষমতা।
সমাজগবেষক খালিদ আল-দোস বলেন, শাশুড়ি চান ছেলের বৌয়ের ওপর কর্তৃত্ব করতে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক ফ্যাক্টরই সউদি সমাজে ৪০% বিয়ে ভাঙ্গার জন্যে দায়ী।
ফ্যামিলি কনসালট্যান্ট আবদুলকরিম আল-ক্বারনি বলেন, ছেলের বৌয়ের ওপর শাশুড়ি কর্তৃত্ব করতে চাওয়ার কারণেই তিন শতাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যায়।
আইনজীবী আহমেদ আল-জিতাইলি বলেন, আদালতে দেখা গেছে, বউ-শাশুড়ির বিরোধে বহু সংসার ভেঙ্গে গেছে, বিশেষ করে মা যখন ছেলের সংসারে থাকেন। প্রায়ই দেখা যায়, দম্পতির একান্ত ব্যাপারে স্বামীর পরিবার হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে দম্পতির প্রাইভেসি ও অন্তরঙ্গতা নষ্ট হয়। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের উচিত বাবা-মা'র সঙ্গে বসা এবং বিনয় ও ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়গুলো সামাল দেয়া।
বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন আমাল আল-ইয়াফায়ে (২৬) নামে এক তালাকপ্রাপ্তা নারী। তিনি বলেন, আমার বিয়ে টিকেছিল দুই বছর। এই সময়টা শাশুড়ি আমার জীবনকে দোজখ বানিয়ে ফেলেছিল। সে আমাদের প্রতিটি ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতো, আমাদের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করতো এবং সারাক্ষণ খিটিমিটি করতো। আর আমার সাবেক স্বামী মায়ের কাছে সারা দিনের কাজের হিসাব দিতো। সত্যি বলছি, এগুলো আমাকে মাঝে মাঝে মহাবিরক্ত করতো।
অনেক নতুন বৌয়ের অভিজ্ঞতাও এর ব্যতিক্রম নয়। হাজেরা আবদুল লতিফ (১৮) নামে একজন জানান তার বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার মাস। এই সময়ে তার আত্মপ্রেমী ও কর্তৃত্বপরায়ণা শাশুড়ি তার বিয়ে ভাঙ্গার কোনো সুযোগই মিস করেননি।
তিনি বলেন, আমার শাশুড়ি পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে এমনভাবে বলতো যেন তারা আমার বিরুদ্ধে চলে যায়। আমি স্বামীকে অনেক বুঝিয়েছি আলাদা হয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে। কিন্তু সে কিছুতেই তার পরিবার ছাড়বে না। আসলে আমার শাশুড়িই আমদের সংসারটাকে ধ্বংস করেছে, নইলে টিকে যেতো।
শাশুড়িদের বিষয়ে এ ধরনের ঢালাও ধারণার বিরোধিতা করে সাহার নাসিফ (৫২) নামে এক ব্যক্তি বলেন, এরকম বহু শ্বাশুড়ি আছেন, যারা বিয়ে প্রতিষ্ঠানের সহায়ক। তারা ছেলেকে উন্নততর জীবন গঠন এবং নতুন সংসার শুরু করতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
নাসিফ বলেন, প্রত্যেক নতুন দম্পতির উচিত আলাদা বাড়িতে বাস করা। সময় এখন বদলে গেছে, নতুন প্রজন্মের জীবনধারা তাদের মতো। আমার তিনটি মেয়ে আছে, শ্বাশুড়ির কারণে তারা কষ্ট পাবে, এটা ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়। কাজেই ছেলের বউয়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করবো সে ব্যাপারেও আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। সূত্র : আরব নিউজ
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী