প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, প্রশাসনে যারা আছেন, তারা যেন তাদের কাজের পরিধির মধ্যে থাকেন। আপনারা আপনাদের পরিধির বাইরে গেলে বিচার বিভাগের উপর চাপ বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, দেশে দুই ধরনের বিচারব্যবস্থা চালু থাকুক এটা দেখতে চাই না। আইনের গতি একটাই। আইন কারো মুখ চেয়ে কথা বলে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথিতযশা আইনজীবী মাহমুদুল ইসলামের স্মরণসভায় সংসদ সদস্যদের প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে মাহমুদুল ইসলাম স্মরণসভা কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জাতীয় সংসদ কোনো ত্রুটিপূর্ণ আইন করলে বিচার বিভাগের ওপর চাপ বেড়ে যায় বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। সেজন্য সংসদকে আইন প্রণয়নের সময় খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এসকে সিনহা বলেন, আশা করব, জাতীয় সংসদের সদস্যরা যখন আইন করবেন, তখন আইনগুলো যাতে সঠিকভাবে হয়। যাতে বিচার বিভাগের ওপর চাপ না পড়ে। আপনারা যখন ত্রুটিপূর্ণ কোনো আইন করবেন, তখন কিন্তু আমাদের ওপর বিচার বিভাগের চাপ পড়ে যায়। তখন আমাদের হস্তক্ষেপ ও মামলা বেড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, একজন বিচারক হিসেবে আমার পরিধি সময়মতো কোর্টে কাজ করা, সময়মতো রায়টা দিয়ে দেয়া। আমি ব্যক্তি বিচারক হিসেবে যাতে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারি।
আইনজীবীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমাদের আইনজীবীরা যারা আছেন, তারা যখন একজন মক্কেলের ব্রিফ নেবেন মাহমুদুল ইসলামের মতো ব্যবহার করবেন। এটার যদি গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তাহলে তিনি ফিরিয়ে দেবেন। যাতে মামলার চাপ কমে যায়। আর যদি পয়েন্ট থাকে, তাহলে মামলাটা যাতে ঠিকমতো প্রেজেন্টেশন করা হয়। আমরা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা ভুলে যাচ্ছি।
আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে উদহারণ দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি জার্মানির একজন বিচারপতিকে উদ্বৃত করে বলেন, আইনের গতি একটাই, আইন কোনোদিন কারো মুখ চেয়ে কথা বলে না। আমরা আইনজীবী, বিচারক, প্রশাসনে যারা আছি, আইন প্রণেতারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের লাইনের ব্যাপারে যদি ওয়াকিবহাল হই, তাহলে মাহমুদুল ইসলামের জীবন, ব্যক্তিত্ব, আইনের প্রজ্ঞা ও নীতির ব্যাপারে যেটা আলোচনা করছি সেটা সার্থক হবে।
অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিনের উপস্থাপনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, আপিল বিভাগের বিচাপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এম. আমীর-উল ইসলাম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীরা মাহমুদুল ইসলামের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন।
বিবার্তা/রোকন/কাফী