যুদ্ধাপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার জন্য করা আবেদন শুনানির জন্য আবারো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে।
প্রস্তুতির জন্য এক মাস সময় পাওয়ার পর রিভিউ শুনানির জন্য আরও সময় চেয়ে আবেদন করেছেন জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় শুরা সদসস্যের আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে বুধবারের কার্যতালিকায় ৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে বিষয়টি।
এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
শুনানির জন্য আসা রিভিউ আবেদনের সঙ্গে শুনানি মুলতবির আবেদনের বিষয়টিও রাখা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বুধবারের কার্যতালিকায়।
এক মাস সময় দেয়ার পর ফের কেন শুনানি মুলতবির আবেদন করা হয়েছে জানতে চাইলে মীর কাসেমের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য গাজী এম এইচ তামিম বলেন, সেটা স্যার (খন্দকার মাহবুব হোসেন) আদালতে বলবেন।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ওই সাজাই বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম।
রাষ্ট্রপক্ষ এরপর রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে। এর ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি নিয়মিত আপিল বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
মামলাটি ২৫ জুলাইয়ের কার্যতালিকায় আসার পর মীর কাসেমের আইনজীবীর সময়ের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়।
আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সেদিন বলেন, প্রস্তুতির জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত এক মাস দিয়েছে। ২৪ অগাস্ট শুনানির তারিখ দিয়েছে।
জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ের এটাই শেষ সুযোগ। রিভিউ আবেদন নাকচ হলে ফাঁসি এড়াতে তিনি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।
রিভিউ খারিজ হলে এবং তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না। ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম এখন আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
দণ্ড মওকুফ চেয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেছেন মীর কাসেম। রিভিউ দায়েরের পর তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এতে ‘ন্যায়বিচার’ পাবেন বলে তারা ‘প্রত্যাশা’ করছেন।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অতীত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলায় পুনর্বিবেচনায় রায় বদলের খুবই ‘খুবই সীমিত’।
যে অভিযোগে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড
১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়।
তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে তিন বিচারকের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় হয়। আপিলেও তা বহাল থাকে। এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
বিবার্তা/রোকন/কাফী