একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার সোহরাব ফকিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করতে ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭১ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকাসহ ছয়টি অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার এ মামলার ফরমাল চার্জ দাখিলের দিন ঠিক ছিল। আজ মামলাটি উত্থাপিত হলে প্রসিকিউশনের করা সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। পরে প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াছমিন মুন্নী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর এই তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ এনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এই মামলায় সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলী (৮৮) ছাড়াও অপর দুই আসামি হলেন শান্তি কমিটির সদস্য হেদায়েথ উল্লাহ ওরফে মো. হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (৮০) ও এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জু (৭০)।
এদের তিনজনের গ্রামের বাড়িই নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার কুলশ্রীতে। তবে আঞ্জু রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হেতেম খাঁ মেথরপাড়ায় থাকেন। অন্যদিকে ছোরাপ একই জেলার মদন থানার জাহাঙ্গীরপুরে বাস করে আসছিলেন।
চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ওই দিনই সোহরাব ফকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে বাকি দুজন পলাতক। আসামিদের তিনজনই একাত্তরে জামায়াতকর্মী ছিলেন। এঁদের মধ্যে আঞ্জু-মঞ্জু এখনো জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৯ মে বেলা ১০-১১টার দিকে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার মধুয়াখালী গ্রামে ২০-৩০টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের শহীদ মালেক তালকুদার ও কালা চান মুন্সিকে অপহরণ, হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।
তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট দুপুর আনুমানিক ১২টা হতে বিকেল পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলার মদন থানার মদন গ্রামে অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।
চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১টা হতে রাত পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার সুখারী গ্রামের শহীদ দীনেশ চন্দ্র, শৈলেশ চন্দ্র, প্রফুল্ল বালা, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, দূর্গা শংকর ভট্টাচার্য, পলু দে, তারেশ চন্দ্র সরকারকে অপহরণ, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।
পঞ্চম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার সুখারী গ্রামের সরকারপাড়ার বিধান কুমার সরকার (সজিব), বাদল চন্দ্র ঘোষকে সপরিবারে, কল্যাণী রাণী সরকার, জীবন চন্দ্র সরকার, প্রণতি সরকার, অজিতা বিশ্বাসসহ আরো হিন্দু পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা।
ষষ্ঠ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমানিক ১০/১১টা থেকে দুপুর আনুমানিক ৩টা পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলার মদন থানার মদন গ্রামের ১৫০-২০০ ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।
বিবার্তা/আমিন/রয়েল